রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান ডেলিভারি নিয়ে ভোগান্তি, ডাক্তার ‘সংকট’

‘কাল হবে’ বলে সিজার আটকে রাখার অভিযোগ, বিপাকে প্রসূতিরা

মোয়াজ্জেম হোসেন কায়সার | প্রকাশিতঃ ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ৪:০১ অপরাহ্ন


রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনের জন্য ভর্তি হওয়া প্রসূতিদের সময়মতো অস্ত্রোপচার না হওয়ায় ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকার কারণ দেখিয়ে অস্ত্রোপচার বিলম্বিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা। এতে মা ও গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির প্রধান এই সরকারি হাসপাতালটিতে শুধু জেলার বাসিন্দারাই নন, পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের মতো বিভিন্ন উপজেলার মানুষও চিকিৎসার জন্য আসেন। বিশেষ করে স্বল্প খরচে ভালো সেবার আশায় ডেলিভারি রোগীরা এই হাসপাতালে ভিড় করেন। তবে সম্প্রতি হাসপাতালটির প্রসূতিসেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা মিজান নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম ঊর্মীকে দ্বিতীয়বার সন্তান প্রসবের জন্য এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে অন্য একটি ক্লিনিকে নিয়মিত চেকআপে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তার স্ত্রীর যমজ সন্তান হবে এবং সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন পড়বে। সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ২৪ এপ্রিল উল্লেখ করা হলেও, তার আগেই প্রসবব্যথা বা অসুস্থতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

মিজান জানান, বুধবার (২৩ এপ্রিল) তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সিজারিয়ান করার কথা জানান।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, যারা সিজারিয়ান অপারেশন করেন, সেই চিকিৎসকরা এদিন উপস্থিত নেই। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) তারা এলে অপারেশন করা হবে। কখনো আবার বলা হচ্ছে, ডাক্তার আসবেন।

এই পরিস্থিতিতে রোগী ও তার গর্ভের সন্তানদের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে মিজানকে অন্য কোথাও, যেমন প্রাইভেট হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মিজান বলেন, “আমার স্ত্রীর মতো আরও কয়েকজন প্রসূতি এখানে ভর্তি আছেন, যাদের সিজারিয়ান প্রয়োজন। তারাও ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ডাক্তার এলেই ডেলিভারি হবে – এই আশায় আমার স্ত্রী এখনো এখানেই ভর্তি। তবে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “কর্তব্যরতরা গতকালের মতো আজও ওষুধ দিয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন যে রোগীর কিছু হবে না, আগামীকাল সিজার হবে। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ কাটছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে হলেও প্রাইভেট হাসপাতালেই যেতে হতে পারে।”

এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে মিজান বলেন, “এখানে লোকজন বলাবলি করছে, এই হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের পাশেই প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতাল আছে। সেগুলোর সেবার মান নাকি ভালো। এসব শুনে মনে হচ্ছে, আমাদের মতো রোগীদের বাধ্য হয়ে সেসব প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানোর জন্যই হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত নই।”

হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকা অবস্থায় এসব তথ্য দেওয়ায় কিছুটা সংশয়ও প্রকাশ করেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা জানান, তিনি বর্তমানে দাপ্তরিক কাজে জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। তবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন এবং হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)-এর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এদিকে, হাসপাতালের আরএমও-এর দাপ্তরিক মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।