সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আর ফিরবে না নাজিফা: সাতকানিয়ায় বাসের চাকায় পিষ্ট প্রবাসী বাবার ছোট্ট পরী

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | প্রকাশিতঃ ১৮ মে ২০২৫ | ৮:২১ অপরাহ্ন


মাত্র পাঁচ বছর বয়স তার, চোখে ছিল হাজারো স্বপ্ন, মুখে লেগে থাকতো অমলিন হাসি। সেই ছোট্ট নাজিফা আক্তার আর কোনোদিন বাবা-মায়ের কোলে ফিরবে না, খেলবে না বন্ধুদের সাথে। আজ (রোববার) বিকেলে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘাতক বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে নিষ্পাপ এই শিশু। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানীহাট-বান্দরবান মহাসড়কের বুড়ির দোকান সংলগ্ন সত্যপীর মাজারের সামনে বিকেল আনুমানিক পাঁচটার দিকে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, যা পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নামিয়ে এনেছে।

নিহত নাজিফা সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বায়তুল ইজ্জত গ্রামের আমতলা এলাকার আবছার উদ্দিনের একমাত্র কন্যা। তার বাবা আবছার উদ্দিন আরব আমিরাতে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু কে জানত এমন দুঃসংবাদ তার জন্য অপেক্ষা করছে!

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আদরের নাজিফা আজ বিকেলে নিকটাত্মীয়দের সাথে বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি) এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিল। আনন্দমুখর সময় কাটিয়ে ফেরার পথে, তারা যখন হাঁটতে হাঁটতে বুড়ির দোকান সংলগ্ন সত্যপীর মাজারের কাছে আসে, তখনই ঘটে যায় জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। রাস্তা পার হওয়ার সময় বান্দরবান থেকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা ‘পূরবী’ পরিবহনের একটি বাস ছোট্ট নাজিফাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিথর হয়ে যায় সে।

নাজিফার চাচা আনছার উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ফুলের মতো ভাতিজিটা আর নেই। কী দোষ ছিল ওর? বিজিটিসি থেকে ঘুরে আসার সময় রাস্তা পার হতে গিয়েই এমনটা হয়ে গেল। বান্দরবান থেকে আসা বাসটা ওকে পিষে দিয়ে চলে গেল।”

নাজিফার মৃত্যুর খবরে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। যে সন্তানকে কিছুক্ষণ আগেও হাসি-খুশি দেখেছেন, তার নিথর দেহ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। প্রবাসী বাবাকে কীভাবে এই দুঃসংবাদ দেওয়া হবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না স্বজনরা। প্রতিবেশীরা জানান, নাজিফা ছিল অত্যন্ত চঞ্চল ও মিশুক প্রকৃতির। সকালবেলাতেও যে মেয়েটি বাড়ির আঙিনায় খেলাধুলা করেছে, বিকেলে তার এমন মর্মান্তিক পরিণতি কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে ঘাতক বাসের চালক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি আটক করেছে এবং পলাতক চালককে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, কেরানীহাট-বান্দরবান মহাসড়কের এই অংশে প্রায়শই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল এবং পথচারীদের অসতর্কতাকে এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন তারা। প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং সড়কে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী, যাতে আর কোনো নাজিফাকে এভাবে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।