চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন ‘ভুক্তভোগীরা’। তবে ওসি ওমর আলী এসব অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে দাবি করেছেন।
রোববার (১৮ মে) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরের ইছাখালী এলাকায় ‘সর্বস্তরের জনসাধারণের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, ওসি ওমর আলী নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছেন, ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করছেন এবং থানায় সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। এ সময় তারা ওসির অপসারণ দাবি করেন। বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি গাড়ির চালকদের কাছ থেকে লাকড়িসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের সময় পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে এবং অনেক সময় গাড়ি আটকে রেখেও হয়রানি করা হচ্ছে।
মানববন্ধনে উপজেলার পূর্ব কোদালা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও মসজিদের ইমাম আহমদুল হক নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, “সম্প্রতি আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে অপহরণ করা হয়। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে ওসি তা গ্রহণ না করে অশালীন গালিগালাজ করেন ও টাকার জন্য চাপ দেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তিনি অভিযুক্তদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার মেয়েকে উদ্ধারে অনীহা দেখান।” আহমদুল হক আরও বলেন, “একাধিকবার থানায় গেলে আমাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভুয়া মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। ওসির এমন আচরণে আমি মানসিক চাপে জীবন কাটাচ্ছি।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ওমর আলী বলেন, “যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে, তারা প্রতিপক্ষ বানিয়ে ঘায়েল করার চিরাচরিত পন্থা অবলম্বন করে। ‘সর্বস্তরের জনসাধারণের’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হলেও সেখানে ১২ থেকে ১৫ জনের বেশি লোক ছিল না। ব্যানার তৈরি করতেই তো এর চেয়ে বেশি খরচ হয়।”
তিনি আরও বলেন, “একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফ্লেভার তৈরি করে সমাজে উৎপাত ও অশান্তি সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়। আমি থানায় কোনো রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির সুযোগ দিচ্ছি না। থানা সবার জন্য উন্মুক্ত এবং এখানে যে কেউ সেবা পাবে। যারা নিজেদের জাহির করতে পারছে না, তারাই মূলত এই মানববন্ধন করেছে।”
আহমদুল হকের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি ওমর আলী জানান, তিনি মেয়ে ও ছেলে উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেছিলেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন। তার ভাষ্যমতে, “ছেলে-মেয়ে উভয়েই জানিয়েছে তারা স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে। তখন মেয়ের এক আত্মীয় বলেন, এটি সামাজিক বিষয়, মেয়ের বাবা মামলা করবে। আমি বলেছিলাম, মামলা করা তাদের বিষয়, তবে তারা সমাধানের জন্য সময় চান। পরে মেয়েটি তার বাবার সঙ্গে ফোনেও কথা বলে। পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়।”
ওসি আরও বলেন, “পরে জানতে পারি, বাবা মেয়েকে অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করেছিলেন, কিন্তু মেয়েটি যাকে পছন্দ করে তার সঙ্গে চলে গেছে। মেয়ের বাবা মূলত থানা-পুলিশের ভয় দেখিয়ে মেয়ের কাবিনের পরিমাণ (৭-৮ লাখের পরিবর্তে ২০ লাখ) বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি কাবিনের বিষয়ে থানায় কথা বলতে রাজি হইনি এবং মামলা করতে চাইলে সেই পরামর্শ দিই।”
ওসি ওমর আলী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন।