সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে অর্থনীতিতে নতুন জোয়ার, ১৭ দিনে ১৬১ কোটি ডলার!

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১৮ মে ২০২৫ | ৮:৫০ অপরাহ্ন


পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে উদযাপিত হবে। মুসলমানদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে কোরবানির পশু কেনা, পরিবার-পরিজনের জন্য বাড়তি খরচসহ নানা প্রয়োজনে দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর সরাসরি প্রভাবে দেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহে নতুন গতি এসেছে। মে মাসের প্রথম ১৭ দিনেই বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি মে মাসের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২৩ টাকা ধরে এই অঙ্ক ১৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অর্থপাচার ও অবৈধ হুন্ডি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো আগের চেয়ে সহজ ও লাভজনক হয়েছে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। এই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল এবং এপ্রিল মাসেও এই ইতিবাচক ধারা বজায় ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মে মাসের প্রথম ১৭ দিনে আসা ১৬১ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ১৫ কোটি ডলারের বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৬ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩১ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

তবে, এই সময়ে ৯টি ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স পায়নি। এর মধ্যে ছয়টি দেশি ব্যাংক হলো – বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি খাতের কমিউনিটি ব্যাংক পিএলসি, সিটিজেন্স ব্যাংক পিএলসি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি এবং সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি। এছাড়া তিনটি বিদেশি ব্যাংক – হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া এই সময়ে কোনো রেমিট্যান্স গ্রহণ করেনি।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে প্রতি মাসেই প্রবাসীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার (সর্বোচ্চ) এবং এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। ঈদুল আজহা সামনে রেখে মে মাসের এই শক্তিশালী সূচনা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।