যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক হার কমানোর ইঙ্গিত মিলেছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে চলমান তৃতীয় দফার আলোচনার প্রথম দিনেই এমন ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে শুল্ক কমানোর ধারণা পেয়েছেন তারা।
ওয়াশিংটন থেকে বুধবার বাংলাদেশ সময় সকালে হোয়াটসঅ্যাপে বাণিজ্য সচিব বলেন, “এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে বলে আমরা দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণ কমবে। তবে কত হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। আরও দুই দিন মিটিং আছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।”
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক চলে। তিন দিনের এই আলোচনা শেষ হবে বৃহস্পতিবার।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আওতায় গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে সবার জন্য ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক রেখে দেশভিত্তিক পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষের আগে ৮ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়।
পাল্টা শুল্ক হার কমাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর সাত লাখ টন করে গম আমদানি এবং সয়াবিন, এলএনজি, তুলা ও সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে ঢাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার। বিপুল এই ঘাটতি সত্ত্বেও ভিয়েতনাম পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার হওয়ায় ভিয়েতনামের চেয়েও কম শুল্ক হার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো ‘শক্ত অবস্থানে’ নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
এর আগে ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ শুল্ক হারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করেছে।
