শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মামলাবাজ’ ফরিদের কারাভোগ শুরু

প্রকাশিতঃ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৭:০৮ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার কালামিয়া বাজার এলাকায় ‘মামলাবাজ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ফরিদুল আলমের (৩৫) কারাভোগ শুরু হয়েছে।

হত্যাচেষ্টা মামলায় দেড় বছর সাজা পাওয়ার এক মাস পর সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মুহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ফরিদ। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সে হিসেবে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদের দেড় বছরের সাজার মেয়াদ শুরু হয়েছে।

এর আগে গত ১১ আগস্ট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালত ফরিদুল আলমকে হত্যাচেষ্টা মামলায় দেড় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি ফরিদের সহযোগী আব্দুল শুক্কুরকে (৭০) এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

রায় প্রদানের সময় আসামি আব্দুল শুক্কুর উপস্থিত থাকলেও প্রধান আসামি ফরিদুল আলম পলাতক ছিলেন।

দণ্ডিত ফরিদুল আলম বাকলিয়ার কালামিয়া বাজার এলাকার আব্দুল নুর সওদাগরের বাড়ির শামসুল আলমের ছেলে। দণ্ডিত অপর আসামি আব্দুল শুক্কুর ফরিদের চাচা এবং একই এলাকার মৃত খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে।

অভিযোগ রয়েছে, কালামিয়া বাজার এলাকায় টাকার বিনিময়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখল-বেদখল, দালালি, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ফরিদ। ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিরীহ ভূমি মালিকদের নামে একের পর মামলা করে আসছেন ফরিদ। তার করা বেশ কয়েকটি মামলা ইতিমধ্যে আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম নামে এক মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীর বৈধ কেনা জমির বিরুদ্ধে প্রথমে নিজের চাচি সাজি বেগমকে দিয়ে আদালতে মামলা করে হেরে যায় ফরিদ। এরপর একই বিষয় নিয়ে একই আদালতে ফুফু গুলচেহেরকে দিয়ে মামলা করেন ফরিদ।

সেই মামলায়ও পরাজিত হলে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কালামিয়া বাজারস্থ ফুলকলির পাশে জাহাঙ্গীর আলমের নির্মিয়মান ঘরে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় ফরিদ ও তার সহযোগিরা। এসময় তারা জাহাঙ্গীর আলমের ঘর ভাঙচুর ও মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট করে। হামলায় বাধা দিলে জাহাঙ্গীরের মা সত্তরোর্ধ রোকেয়া বেগমের উপরও হামলা চালায় তারা। এতে রোকেয়া বেগমে ডান হাত ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।

পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম সুস্থ হলেও তার বৃদ্ধ স্বামী ফারুক আহমেদ ঘটনার আকস্মিকতায় স্ট্রোক করে দীর্ঘ নয়মাস শয্যাশায়ী থাকার পর করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

অপরদিকে বৃদ্ধ মায়ের উপর হামলার ঘটনায় আদালতে জাহাঙ্গীর আলম মামলা দায়ের করলে ফরিদ পুনরায় তার চাচা শুক্কুরকে দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী ও বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। আদালত দুটি মামলাই বাকলিয়া থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই শাহীন ভূঁঞা মামলা দুটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ফরিদ ও তার চাচা শুক্কুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে ফরিদের দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা বলে পুলিশের কাছে প্রতীয়মান হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহীন ভূঁঞা প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীর আলম ও তার মাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়ে তথ্য-প্রমাণে উল্লেখ করেন। পরে আদালত ফরিদ ও তার চাচা শুক্কুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে নগরীর জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকা থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সেই মামলায় দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আবদুল হালিম রায় ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি ভূমিদস্যু চক্রের অন্যতম হোতা ফরিদ। সে নিজের আত্মীয় স্বজনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে বিভিন্নজনের জমির বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে। তার পেছনে বিশাল একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। ২০১৯ সালে তার বাহিনী আমার ঘরে হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে আমার বয়োবৃদ্ধ মাকে মারধর করে ডান হাত ভেঙে দেয়। আমাকেও হত্যার উদ্দ্যেশ্যে হামলা করে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানসিক যন্ত্রণায় আমার বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আদালতে আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।’