শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

প্রকৃতির হাতে সাজানো শ্রেণিকক্ষের আঙিনা

সাইফুল আযম | প্রকাশিতঃ ২১ মে ২০২৫ | ১০:২৬ অপরাহ্ন


আমি সাইফুল আযম, বান্দরবানের কাইচতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। মেঘ পাহাড়ের আলিঙ্গনে আর সবুজের সমারোহে নিত্য জেগে থাকা আমাদের এই অপরূপা বান্দরবান। এই পাহাড়ি জেলার মনোরম পরিবেশেই আমাদের বিদ্যালয়টি অবস্থিত। আর এই বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার যেন মুহূর্তেই যে কাউকে নিয়ে যাবে জাতীয় ফলের এক জীবন্ত, শ্বাসরুদ্ধকর প্রদর্শনীতে!

সুউচ্চ বৃক্ষগুলোর বলিষ্ঠ কাণ্ড আর প্রসারিত শাখা-প্রশাখা আঁকড়ে ধরে, কেমন থরে থরে ঝুলে আছে বিশালাকার, কণ্টকাকীর্ণ আবরণে ঢাকা পুষ্ট রসালো কাঁঠাল! কোনটি গাঢ় সবুজ, কোনটি ধারণ করেছে হলুদাভ আভা – প্রতিটি ফলই যেন প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদের নীরব অথচ সরব সাক্ষী। এমন নয়নাভিরাম, হৃদয় জুড়ানো দৃশ্যগুলো যখনই দেখি, আমার মনটা ভরে ওঠে। এই অপার সৌন্দর্যকেই পরম যত্নে আমার ক্যামেরার লেন্সে বন্দী করার চেষ্টা করেছি। প্রকৃতির প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা আর এই অপরূপ সৃষ্টিকে সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

আমার তোলা এই ছবিগুলো, আমি বিশ্বাস করি, নিছক রসালো ফলের সমারোহের চেয়েও অনেক বেশি কিছু প্রকাশ করে। এগুলো যেন আমাদের শিক্ষাঙ্গনের প্রাণবন্ত সবুজ চত্বর, শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখর খেলার মাঠ আর শ্রেণিকক্ষের জ্ঞানালোকের সাথে মিলেমিশে থাকা বান্দরবানের আদিম, অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক জীবন্ত দলিল। প্রতিটি ফ্রেমে আমি প্রকৃতির সেই নিপুণ হাতের কারুকাজ ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি – যেখানে ইট-পাথরের কাঠামোর পাশেও সবুজের স্নিগ্ধ, কোমল পরশ মন ছুঁয়ে যায়; যেখানে পাঠ্যপুস্তকের নির্দিষ্ট অক্ষরের বাইরেও প্রকৃতি তার বিশাল ক্যানভাসে মেলে ধরেছে জীবনের অফুরন্ত, বিচিত্র পাঠ।

সত্যিই, এখানে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে, পরম মমতায় সাজিয়েছে আমাদের শ্রেণিকক্ষের বাইরের সুবিশাল আঙিনাটিকে। আমার শিক্ষক হৃদয়ে আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি, এই প্রাকৃতিক প্রাচুর্য আর নির্মল পরিবেশ আমাদের কচি শিক্ষার্থীদের মনোজগতে নিঃসন্দেহে এক গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাদের আরও কৌতূহলী, সংবেদনশীল ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।