
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে। উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইছহাক মিয়া সড়ক সংলগ্ন মেহেরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে এই নির্মাণকাজ চলছে, যেখানে পিলার তুলে ইতোমধ্যে ভবনের ভিত্তি দৃশ্যমান করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাজটি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে রাস্তার পাশে কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাধা দিতে গিয়ে হুমকি পেয়ে ফিরে এসেছেন।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড় কাটার কাজ বেশিরভাগ সময় রাতেই করা হয়, তবে দিনের বেলাতেও প্রকাশ্যে মাটি পরিবহন করতে দেখা যায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রবাসী শরাফত আলী পাহাড় কেটে এই পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। বনবিভাগের লোকজন এসে কয়েকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ভবন নির্মাণ কাজে তদারকিতে থাকা লোকজন তাদেরকে পাহাড় কাটার স্থানে যেতে দেয়নি এবং উল্টো হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।
এই কারণে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের অদূরে গিয়ে ড্রোন উড়িয়ে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের স্থান পর্যবেক্ষণ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তারা বহু বছর যাবত এখানে বসবাস করে আসলেও আগে এখানে সবুজ পাহাড় দেখেছেন, যা এখন কেটে সমান করে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বর্ষায় পাহাড় ধসে পড়লে আশপাশে বসবাসকারী মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানান, পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকলে এলাকায় পানি ধারণক্ষমতা কমে যেতে পারে, যার ফলে বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া পাহাড় ক্ষয় হওয়ার ফলে আশেপাশের ছড়া–খাল ভরাট হয়ে যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে এবং বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক আবাসস্থল চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম জানান, পাহাড় কেটে যে স্থানে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে খাস খতিয়াভুক্ত ও বন বিভাগের জায়গা দুটিই রয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়, এতে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী ইমরান জানান, খবর পেয়ে কয়েকবার পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণের স্থানে গিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই পাহাড় কেটে পাকা ভবন নির্মাণে জড়িতদের ‘উগ্র আচরণের কারণে’ ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দেলোয়ার হোসেন জানান, খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে ওই পাহাড়টি খাস খতিয়ানভুক্ত। তবে বনের জায়গায় পাহাড় কেটে বসতঘর নির্মাণ করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন জানান, পাহাড় কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।