বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

জিয়ার স্মৃতি বুকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে ফিরছেন কাজী আলম

রাঙ্গুনিয়া থেকে চাইবেন ধানের শীষ
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | প্রকাশিতঃ ১১ অক্টোবর ২০২৫ | ৬:৪৯ অপরাহ্ন


রাঙ্গুনিয়ার রাজনীতির ময়দানে আবারও আলোচনায় ফিরে এসেছেন একসময়ের দাপুটে নেতা কাজী এম. এন. আলম। দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনয়ন চাইবেন। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের (জাগদল) গোড়াপত্তন থেকে শুরু করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন এই নেতা শনিবার (১১ অক্টোবর) ঠান্ডাছড়ি চা বাগানে নিজের বাংলোতে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তার এই প্রত্যাবর্তনের কথা জানান।

কাজী আলমের এই ঘোষণা যেন রাঙ্গুনিয়ার রাজনৈতিক টাইমলাইনে কয়েক দশক পেছনে ফিরে যাওয়া। তার গল্প শুরু হয় স্বাধীনতার পর, ১৯৭৭ সাল থেকে। তিনি বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন জাতীয় নেতৃত্বে এলেন, তাঁর চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ড আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তখন আমি বৃহত্তর রাজানগরের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তাঁর প্রতিটি ভাষণ শুনে আমি অভিনন্দন বার্তা পাঠাতাম।”

সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কাজী আলমের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি যখন প্রথম রাঙ্গুনিয়ায় আসেন, আমরা তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে রাঙ্গুনিয়াবাসীর পক্ষ থেকে আমিই মানপত্র পাঠ করি। তিনি আমার পাঠে মুগ্ধ হয়ে ডেকে প্রশংসা করেন এবং উপ-প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমাকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দেখা করতে বলেন।”

সেই সাক্ষাৎই তার রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কাজী আলমের ভাষ্যমতে, জিয়াউর রহমান তাকে বলেছিলেন, “আমরা চাই নতুন, তরুণ ও উদীয়মান নেতৃত্ব দিয়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে।” আর সেই লক্ষ্যেই গঠিত হয়েছিল জাগদল। বৃহত্তর চট্টগ্রামের জাগদলের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ফটিকছড়ির ডা. মোহাম্মদ নুরুচ্ছফার সাথে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জাগদল যখন বিএনপিতে রূপান্তরিত হয়, তখনো তিনি ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক।

১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সেই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলেও দলের কর্মী হিসেবে মাঠ ছাড়েননি।

কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় তাকে সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে কাজী আলম বলেন, “আমি অনুপস্থিত ছিলাম না, পর্যবেক্ষক ছিলাম। দলের কর্মকাণ্ড খুব কাছ থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। এখন আমার মনে হচ্ছে, দলের স্বার্থে এবং রাঙ্গুনিয়ার মানুষের জন্য সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার সময় এসেছে।”

প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথেই তিনি নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, “দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যদি আমাকে যোগ্য মনে না করে, অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, আমি কখনো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। কারণ এই দল তো আমার নিজের হাতে গড়া। জিয়াউর রহমানের একজন সহকর্মী হিসেবে দলের স্বার্থই আমার কাছে সবচেয়ে বড়।”

কাজী এম. এন. আলমের রাজনৈতিক জীবন বেশ বর্ণাঢ্য। তিনি জাগদল ও বিএনপির বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক, রাঙ্গুনিয়ার প্রথম আহ্বায়ক এবং বিএনপির বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রথম নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাঙ্গুনিয়ার প্রথম নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বৃহত্তর রাজানগরের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবায়ও তার দীর্ঘদিনের পদচারণা রয়েছে। রাজানগর-লালানগর সীমান্তে হযরত শাহসূফী কাজী সালেহ্ আহমদ ইবতিদায়ী মাদ্রাসাসহ বহু ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনি প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মতো একাধিক সংগঠনের আজীবন সদস্য হিসেবে তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

দীর্ঘ বিরতির পর জিয়ার পুরনো এই সৈনিকের রাজনীতির মাঠে ফেরার ঘোষণা রাঙ্গুনিয়ার বিএনপি শিবিরে নতুন করে কতটা প্রাণসঞ্চার করে এবং আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নের লড়াইয়ে তিনি কতটা প্রভাব ফেলেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।