বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

ঐকমত্যের চেষ্টায় ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষর ইউনূস-ফখরুল-জামায়াত নেতাদের, দূরে এনসিপি-বামেরা

অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’-পুলিশ সংঘর্ষ, সনদে শেষ মুহূর্তে সংশোধন
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | ৬:১৮ অপরাহ্ন


গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে একটি ঐকমত্যের চেষ্টায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তবে এই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং কয়েকটি বামপন্থী দল।

শুক্রবার বিকেলে একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়, যার আগে অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া একদল লোকের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

বিকেল ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সনদে স্বাক্ষর করেন। তার সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও স্বাক্ষর করেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার; এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ; এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান সনদে স্বাক্ষর করেন।

তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পাওয়ায় এনসিপি এবং সংশোধিত খসড়া না পাওয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে।

সংঘর্ষ ও বিলম্ব

বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই উত্তেজনার মধ্যেই বৃষ্টি নামে এবং অনুষ্ঠান শুরু হতে বিলম্ব হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে জানান, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান দেরিতে শুরু হচ্ছে।

উপদেষ্টা ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া

অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “খুব ভালো সনদ হতে যাচ্ছে। কিছু ভিন্নমত আছে, ভবিষ্যতে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা গেলে গণতন্ত্রের পথে একটি শক্ত যাত্রা শুরু হবে।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের সংঘর্ষকে ‘বিব্রতকর ও লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আইনজীবী শিশির মনির জানান, ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ দাবি মেনে নিয়ে সনদের পঞ্চম দফা সংশোধন করা হয়েছে, তাই তাদের আর কোনো উদ্বেগ থাকার কথা নয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সি আর আবরার, আলী ইমাম মজুমদার, ফারুক-ই-আজম, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।