বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতি-অনুরাগ, তাই ডিসি মমিনুর চট্টগ্রামে

প্রকাশিতঃ ১২ জানুয়ারী ২০২১ | ৫:৪০ অপরাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি আমাকে চট্টগ্রামের ডিসি করে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামে তাঁর অনেক স্মৃতি আছে, আছে এই জনপদের মানুষের প্রতি বাড়তি অনুরাগ, ভালোবাসা। চট্টগ্রামের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে তিনি আমাকে বললেন, যাও, চট্টগ্রামের মানুষের সেবা করো, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোকে এগিয়ে নাও।’

মঙ্গলবার (১২ জানয়ারি) বিকেলে একুশে পত্রিকার সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এই কথা বলেন চট্টগ্রামের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

আলাপের ফাঁকেই নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে আসেন লোহাগাড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন চেয়ারম্যান। তারা নতুন ডিসিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, ফটোসেশান করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক জানতে চান, সব চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত কিনা! সমস্বরে নৌকা প্রতীক বলে উঠার পর জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, তাহলে তো আপনাদের দায়িত্ব অনেক। এই প্রতীকের পবিত্রতা, মর্যাদা রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

এসময় একজন চেয়ারম্যান বলে উঠেন, জ্বি স্যার, এমন কোনো কাজ করব না, যাতে আপনার সম্মানহানি হয়। ডিসি বললেন, আমার সম্মানের চেয়ে আপনার নিজের সম্মান রক্ষা করবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মান রক্ষা করবেন।

জ্বি স্যার, বলেই চেয়ারম্যানবৃন্দ এবার আবদার করলেন তাদের কিছু বিষয় নিয়ে বসে কথা বলার। ডিসি সানন্দে তাদের সামনের সোফায় অপেক্ষা করতে বললেন।

ডিসি ফের শুরু করলেন একুশে পত্রিকার সঙ্গে আলোচনা। শোনালেন তার কর্মজীবনের কিঞ্চিৎ। ২২ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ২০০৩ সালে যোগ দিয়ে কাজ করেন নানা নানা পদে, নানা অঞ্চলে। চাকরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর জন্ম এলাকা টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উপজেলায় ইউএনও হিসেবে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ১২ ও পরিচালক ১৩ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বলেন, ‘চাকরির কারণে যেখানেই গিয়েছি দেশের স্বার্থ, জনস্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করেছি। যতদিন চাকরিতে আছি, যেখানেই থাকি এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাব।’

এসময় ডিসির পিয়ন এসে ছোট্ট স্বরে জানালেন, চেয়ারম্যানরা ৯ জন এবং ৩ জন মিলে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনায় বসতে চান। ডিসি বললেন, ঠিক আছে, কনফারেন্স রুমে আলাদা করেই বসব, আমি শুনব তাদের কথা।

তখনই বেজে উঠে জেলা প্রশাসকের ফোন। অপর প্রান্তে এক নারীকণ্ঠ। তিনি আবদার করলেন, তার কথাটা একটু সময় দিয়ে শুনতে। ডিসি মমিনুর রহমান অভয় দিলেন। বললেন, ডিসিকে সব কথা বলা যায়। বলুন, আমি সবার কথা শুনব।

সন্তানের স্কুল ট্রান্সফারের সংক্রান্ত অনুরোধটাই দুই মিনিটের বেশি সময় ধরব শুনলেন তিনি। এরপর ডিসি বললেন, ভর্তি প্রক্রিয়াটা শেষ হোক। যৌক্তিক অনুরোধ হলে ভদ্র মহিলার অনুরোধটি রাখার চেষ্টা করবেন জানিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে পুনর্বার ফোন করতে বলেন ডিসি।

প্রসঙ্গত ২০১৯ সালে দু’বার ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবারসহ মোট তিনবার পবিত্র ওমরা পালনের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, মানবিক, কল্যাণকর কাজের পাশাপাশি ধর্মকর্মও আমার দুর্বলতা ও আগ্রহের বিষয়। তাই জমানো ছুটি দিয়ে স্ত্রী, তিন ছেলেকে নিয়ে আল্লাহ আমাকে তিনবার পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ দিয়েছেন।

৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ডিসি হিসেবে যোগদান করার আগে মোহাম্মদ মমিনুর রহমান উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব পদে দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক পদে বদলি হন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১২, পরিচালক-১৫ ও পরিচালক (প্রশাসন) পদে দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত।

ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলে-ফাইয়াদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, নাফি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও নুর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র জনক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তাঁর স্ত্রী মোছাম্মৎ রাবেয়া নাহার গৃহিণী।