শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেএসআরএমের ২৩১ কোটি টাকা রাজস্ব ‘ফাঁকি’

প্রকাশিতঃ ১৮ জুলাই ২০২১ | ২:৩৬ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (কেএসআরএম) সরকারের ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা রাজস্ব ‘ফাঁকি’ দিয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত মে মাস পর্যন্ত সময়কালের হিসাবের ওপর বিশেষ অনুসন্ধান চালিয়ে এ অনিয়ম ধরা পড়ে। ইতিমধ্যে কেএসআরএম’র বিরুদ্ধে মূসক আইনে মামলা করা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কেএসআরএম’র বিরুদ্ধে সরবরাহের বিপরীতে অপরিশোধিত ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা ও উৎসে মূসক বাবদ অপরিশোধিত ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৪ টাকা রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে কেএসআরএম ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৬ টন স্টিল সরবরাহ করে। এর বিপরীতে ১৮৮ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪ টাকা সরকারি মূসক পরিশোধের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৮১৭ টাকা। এতে ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা পাওনা থাকে সরকার।

অন্যদিকে কাঁচামাল ক্রয়সহ সকল কেনাকাটার বিপরীতে মূসক কর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানেনি ইস্পাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ক্রয়ের বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তনের কোনো দলিলাদি উপস্থাপন করতে পারেনি তারা।

এদিকে ৪ বছর ৫ মাসে ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন কাঁচামাল ক্রয় করা হয়। এসব পণ্যের বিপরীতে উৎসে মূসক ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৪ টাকা পরিশোধ করেনি। মূসক ও উৎসে মূসক মিলে সর্বমোট ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকা ফাঁকি দেয় কেএসআরএম।

কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ আকরব হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে কেএসআরএম’র মূসক ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাই আমরা। এরপর বিধি মোতাবেক আমাদের নিবারক দলের মাধ্যমে তল্লাশি এবং তদন্তে বিশাল ফাঁকি বের হয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, কেএসআরএমকে শিগগিরই কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হবে। তারা তাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে ফাঁকিকৃত রাজস্বের সমান পরিমাণ এবং প্রযোজ্য সুদ পরিশোধ করতে হবে। ফাঁকিকৃত অর্থ তাদের কোষাগারে জমা দিতে হবে।

যারা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ আকরব হোসেন।

কেএসআরএমের বক্তব্য

এ ব্যাপারে কেএসআরএম মোটেই অবগত নয় জানিয়ে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের দাবি, ভ্যাট কমিশনারেট ইতিমধ্যে কিছু ডকুমেন্ট জব্দ করলেও আমাদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমাদেরও কিছু জানানো হয়নি লিখিত বা মৌখিকভাবে। তা না করে বিবৃতি দিয়ে কেএসআরএমকে হেয় করা হচ্ছে।

এ সংক্রান্ত কেএস আরএম ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিষয়টি বন্ধের দিন গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ আকারে পাঠানো কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। এতে করে বিষয়ের সত্যতা যাচাই ও অবগত না হয়ে আমাদের পক্ষে কোনো ধরনের বক্তব্য দেওয়ারও সুযোগ নেই। এটি মূলত একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত। আমাদের সঙ্গে ইতিপূর্বে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা হয়নি সংশ্লিষ্টদের সাথে। অথচ এ সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা অপ্রত্যাশিত। জানায় প্রতিষ্ঠানটি।