রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর চিন্তা

প্রকাশিতঃ ১ জানুয়ারী ২০২২ | ৪:৪০ অপরাহ্ন


মোহাম্মদ রফিক : আন্তর্জাতিক বাজারে কমায় দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে কিনা তা নিয়ে সরকারের ভেতর আলোচনা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গেল সপ্তাহে বিপিসি থেকে সাম্প্রতিক সময়ে তেল বেচাকেনা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে পাঠানোর পর এ আলোচনা হচ্ছে।

বিপিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবটিতে সাম্প্রতিক সময়ে তেল বেচাকেনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়ে তেলের দাম কমানোর বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। এর সুফলও পাচ্ছে বিপিসি। এখন প্রতি লিটার ডিজেলে ৩ থেকে ৫ টাকা লাভ হচ্ছে। ২০১৪-এর জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৭ বছরে বিপিসির মুনাফা হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানি তেল বিক্রি করে গেল চার মাসে (জুন থেকে অক্টোবর) বিপিসির লোকসান হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে বাড়ানো হয় ১৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অয়েলের দাম এখন ৭২ ডলার।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘অমিক্রন’ ছড়িয়ে পড়ায় তেলের দাম কমতে শুরু করেছে৷ জ্বালানি খাতে বিপিসির লাভের পাল্লা ভারী হচ্ছে। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে থাকায় গত কিছুদিন ধরে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩ থেকে ৫ টাকা লাভ করছে বিপিসি।

তেলের দাম কমানো হবে কিনা, তা জানতে বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদকে আজ শনিবার দুপুরে এ প্রতিবেদক কল করলেও বান্দরবানে এক অনুষ্ঠানে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করেননি। সংস্থাটির অপারেশন্স ও পরিকল্পনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে তেল বেচাকেনা সংক্রান্ত একটি আর্থিক প্রস্তাব জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন তা বিশ্নেষণ করে সরকার সিদ্ধান্ত দেবে তেলের দাম বাড়বে না কমবে।”

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এ টাকার বড় একটি অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। ২০১৪-১৫ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্যাক্স-ভ্যাট হিসেবে ৪০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে বিপিসি।

সংস্থাটির দাবি, গত জুনে লিটার প্রতি ২.৯৭ টাকা, জুলাইয়ে ৩.৭০ টাকা, আগস্টে ১.৫৮ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫.৬২ টাকা এবং অক্টোবর মাসে ১৩.০১ টাকা, নভেম্বরে ১৩.৪৫ টাকা লোকসান হয়েছে বিপিসির। এ কারণে ৩ নভেম্বর প্রতিলিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। যেখানে প্রতি লিটার ডিজেলে কর ও ভ্যাট হিসেবে বিপিসি সরকারকে ১৯ টাকা দেয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম গণমাধ্যমকে বলেন, হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। একটু পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। পাঁচ মাসে এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির কারণে বিপিসি তেলের দাম বাড়িয়েছে। প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। তেলের দাম বাড়িয়ে পরিবহন ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। দেশে দাম সরকার কমাবে কিনা তা দেখার বিষয়।”

সুত্র জানায়, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল দেশে এনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিনসহ বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করা হয়। বাকি চাহিদা পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে মেটানো হয়। অকটেনের বড় অংশই দেশে উৎপাদিত হয়। জেড ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল আর ডিজেল প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।

দেশের চাহিদার ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল ৫০ লাখ টন, যার ৪০ লাখ টন আমদানি করা হয়। ডিজেলের ৬৩ শতাংশ ব্যবহূত হয় পরিবহন খাতে। আর সেচ কাজে ব্যবহার হয় ১৬ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬ শতাংশ ডিজেল চালিত।