চট্টগ্রাম : দুর্বৃত্তদের লোহার রডের আঘাতে হারুনের পেটের দুটি খাদ্য নালী ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল। আঘাতের কারণে হারুনের যে হাল হয় তার ছবি দেখে দুর্বল হৃদয়ের কোন ব্যক্তি সহ্য করতে পারবেন না। প্রায় ১০ মাস আগে অস্ত্রেপচারের পরও পেটের সমস্যা এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি তার।
ভুক্তভোগী হারুনের পেটে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের দেয়া মেডিকেল প্রতিবেদনেও উল্লেখ ছিল। এরপরও আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার ৩০৭ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাটহাজারী থানার এসআই প্রদীপ চন্দ্র দে। ফলে কারাগারে যেতে হয়নি আসামিদের।
এই সুযোগে মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন দুই আসামি। তাই তাদের জামিন বাতিলের আবেদন করেন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর ছোট ভাই আনু মিয়া।
আজ বুধবার চট্টগ্রামের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শাহরিয়ার ইকবাল সব পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রধান আসামি মো. জামালের বিরুদ্ধে ৩০৭ ধারার পাশাপাশি ৩২৩, ৩২৫ ও ৫০৬ ধারার অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পাশাপাশি মামলার অপর আসামি মো. জাবেদের বিরুদ্ধে ৩২৩ ও ৫০৬ ধারার অপরাধ আমলে নিয়ে তাকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত জামিন দেন। আরেক আসামি মো. সাজিম মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।
এর আগে ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মির্জাপুরের ছনখোলা বিলের নিজের জমি থেকে মাটি তুলে বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় হারুনের পেটে উপর্যুপরি আঘাত করেন দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর ছোট ভাই আনু মিয়া। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করতে হাটহাজারী থানার ওসিকে আদেশ দেন।
মামলায় ৩২৩, ৩০৭, ৩২৪, ৩২৫, ৫০৬(২) ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় তিন আসামির বিরুদ্ধে। এরা হলেন- হাটহাজারীর মির্জাপুরের জাফর হাজীর বাড়ীর মৃত সিদ্দিক আহমদের ছেলে মো. জামাল (৩৫), মনার বাড়ীর মৃত আবদুল মন্নানের ছেলে মো. সাজিম (২৫) ও মো. শাহজাহানের ছেলে মো. জাবেদ (১৯)।
তদন্ত শেষে গত ২৯ মার্চ দুই আসামি জামাল ও জাবেদের বিরুদ্ধে ৩২৩, ৩২৫ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাটহাজারী থানার এসআই প্রদীপ চন্দ্র দে। এরপর অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ নারাজি দিলে আদালত হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতের ৩০৭ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে প্রধান আসামি জামালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
আদালতের এসব আদেশের ফলে সুবিচার পেয়েছেন উল্লেখ করে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘উক্ত মামলায় আসামিদের বাঁচাতে হত্যাচেষ্টার ৩০৭ ধারায় অভিযোগপত্র দেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফলে কঠিন শাস্তি থেকে আসামিদের পার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আসামির শেষ রক্ষা হয়নি, জেলে যেতে হয়েছে। আদালতের বিচক্ষণতায় আমরা সুবিচার পেয়েছি।’