:: একুশে প্রতিবেদক ::
চট্টগ্রাম: রোববার ভোর সাড়ে ৫টার পর থেকেই পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসার আশপাশে অবস্থান নেয় খুনিরা। ভোর ৫টা ৫৮ মিনিটে জিইসি এলাকায় অবস্থান নেয় সেই ‘কালো মাইক্রোবাসটি। আর বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে খুনের ঘটনা ঘটে ৬টা ৩২ মিনিটের দিকে। দীর্ঘ প্রায় ১ ঘন্টা অস্ত্র নিয়ে খুনিরা ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, খুনের আগে-পরে এই দীর্ঘ সময়ে পুলিশের মোবাইল টিমগুলো (টহল দল) কি করছিল। ঘটনার দিন সকালে বাবুল আক্তারের বাসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যও অনুপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি দাযিত্বশীল সূত্র জানান, বাবুল আক্তারের বাসার সামনে এবং উল্টো দিকে অবস্থান নেওয়া যুবকদের সবাই খুনি চক্রের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনে তাদের কথা বলা এবং গতিবিধি সন্দেহজনক। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অস্ত্র নিয়ে তারা প্রায় এক ঘন্টা ঘটনাস্থলে অপেক্ষায় ছিল। ঘটনা ঘটিয়ে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায় খুনিরা। এই সময়ে সে সব এলাকায় টহলের দায়িত্বে থাকা মোবাইল টিমগুলোর ভূমিকা কি ছিল; সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, ঘটনাস্থল জিইসি মোড় এলাকা পাঁচলাইশ, চকবাজার ও খুলশী থানার সীমান্ত। তবে যে এলাকায় ঘটনা হয়েছে সেটা পাঁচলাইশ থানার অধীনে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে সীমান্ত এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালনে থানা পুলিশের মধ্যে ‘রশি টানাটানি’ চলে। নেতিবাচক কিছু হলে কোন থানা দায় নিতে চায় না। থানা পুলিশের এ ‘দুর্বলতাকে’ সুযোগ হিসেবে নিয়েছে অপরাধী চক্র। আর একটি বিষয় পুলিশের কাজ সন্দেহ করা। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে টহল টিমের সদস্যরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আর এতেই কাল হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘পাঁচলাইশ থানা এলাকায় টহলের জন্য সবসময় তিনটি মোবাইল টিম থাকে। বাদুরতলা থেকে জিইসি পর্যন্ত একটি মোবাইল টিম থাকে। ঘটনার আগেই ওই এলাকা টহল দিয়ে আসে পুলিশের মোবাইল টিম। পরে ৬টা ৩২ মিনিটে ঘটনা ঘটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে মোবাইল টিম। তবে ঘটনার ঠিক কতক্ষণ আগে-পরে মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে যায়- তা আমার জানা নেই।’
একই প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার এসআই রিতেন কুমার সাহা বলেন, ‘রোববার সকাল পৌনে ৬টার দিকে জিইসি এলাকা টহল দেয় মোবাইল টিম। এরপর মোবাইল টিমের গাড়িটি বাদুরতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।’ ঘটনার দিন মোবাইল টিমের নেতৃত্বে কে ছিলেন- সে তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সহকারি কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন ও এসআই রিতেন। এছাড়া ঘটনার বিষয়ে কোন প্রকার কথা বলতে রাজী হননি পাঁচলাইশ থানার ওসি মহি উদ্দিন মাহমুদ।
এদিকে গত রোববার সকালে বাবুল আক্তারের বাসায় নিরাপত্তার দায়িত্বে কোন পুলিশ সদস্য ছিলেন না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে বদলি হলেও বাবুল আক্তারের বাসা থেকে গার্ড প্রত্যাহার করা হয়নি। দুজনই রয়েছেন। বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে।’
ঘটনার দিন বাবুল আক্তারের ফুফাতো ভাই মোঃ ওয়াহিদ বলেছিলেন, পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন প্রতিদিন সকালে এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিত। কিন্তু রোববার সকালে তার অনুপস্থিতে জিইসি এলাকায় স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে বাসার কাছেই খুন হন ভাবী।
এদিকে রোববার সকালে বাবুল আক্তারের বাসায় কাঁদতে কাঁদতে কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শনিবার রাতে ভাবী ফোন করেননি। ফোন করলে সকালে আমি যেতাম। তাহলে হয়তো ভাবি বেঁচে যেতেন। আমি কেন যে বাসায় গেলাম না..।
গত রোববার সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসকের কক্ষে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানার ওসি মহি উদ্দিন মাহমুদকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আমার পরিবারকে কেন দেখে রাখা হয়নি? আমি তো আগেই বলেছিলাম, তারা আমার পিছু ছাড়বে না।’ একই দিন দুপুরে নিজের বাসায় পিবিআইয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। আমি তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তার আগেই মাকে হারিয়েছে তারা।’