বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ডিম, আলু ও পেঁয়াজ

প্রকাশিতঃ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১১:০১ পূর্বাহ্ন


একুশে প্রতিবেদক : সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে মিলছে না ডিম, আলু ও পেঁয়াজ। ব্যবসায়ীরা পণ্য তিনটি বিক্রি করছেন আগের মতোই ইচ্ছামতো দামে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে ও আড়তে না কমলে তাদের কম দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। এদিকে দাম কমার খবর শুনে বাজারে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা।

দাম নির্ধারণের পাশাপাশি সরকার কঠোরভাবে বাজার তদারকিরও ঘোষণা দিয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই বাজারে তদারকি করবে বলা হলেও তারা তেমন বাজারে নামছে না বলে অভিযোগ আছে।

ভোক্তারা বলছেন, সরকার দাম বেঁধে দিয়েই দায় সারছে। তারা নিত্য ঠকেই যাচ্ছেন। সরকারের নির্দেশনা মানছে না কেউ। শুধু মুখে না বলে সরকারের উচিত প্রতিটি ধাপে পণ্যের মজুত পর্যালোচনা করা এবং বাজারে যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করা। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে মাঠে না নামালে অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

নির্ধারিত দর কার্যকর না হলেও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করেছেন পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম শক্তভাবে তদারকি করা হচ্ছে। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরে লোকবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিচ্ছেন। এর পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। গতকাল রংপুরে নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দেশনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কার্যকর করা কঠিন। কারণ, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে নতুন দরের পণ্য পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। তাই তারা এখন উৎপাদন ও মজুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং এসব পর্যায়ে নির্ধারিত দাম কার্যকরের বিষয়ে বেশি মনোযোগী। এসব স্তরে দাম স্বাভাবিক হলে খুচরায় নির্ধারিত দর কার্যকর হবে বলে মনে করেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তখন তিনি জানান, ওই দিন থেকেই খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। তবে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ৯টি খুচরা বাজার ঘুরে সরকারি নির্দেশনার প্রতিফলনের চিত্র দেখা যায়নি। এসব বাজারের কোনোটিতে পণ্য তিনটি নির্ধারিত দরে বিক্রি হয়নি। দেশের অন্যান্য স্থানেও দাম কমেনি।

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫, দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, সাদা আলু ৪৮ থেকে ৫০, লাল আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেই হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা। একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, আগে বেশি দামে কেনা পণ্য এখন কম দামে বিক্রি সম্ভব নয়। পাইকারিতে কমলে খুচরা বিক্রেতারাও কমাতে পারবেন।

কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আব্বাস হোসেন বলেন, ‘বুধবার আলু কিনেছি পাঁচ বস্তা। বেশি দামে কিনে কম দামে বেচি কীভাবে। সরকারি দামে তো আর বাজার চলছে না কোথাও। সরকার তো আর বাজারে আহে না। আড়তেও সরকারের গল্প শোনাল, দাম তো কম রাখল না।’

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, কয়েকদিন ধরেই বাজারে কারসাজি চলছে। তাই দর বেঁধে দেওয়াকে স্বাগত জানাই। কিন্তু বাজারে সেই চিত্র দেখা যায়নি। তাই দর নির্ধারণ করে দায় সারলে হবে না। মাঠ পর্যায়ে এটি কার্যকর করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নিয়ে সমন্বিত বাজার তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা বাজার তদারকিকে হাস্যকর করার জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করতে চান। এ জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যেসব পণ্য নিয়ে কারসাজি হয়, সেগুলো দ্রুত আমদানি করতে হবে।

শুধু ভোক্তা অধিদপ্তরের একার পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমাতে ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা এসব জেলায় দাম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উৎপাদন এলাকাগুলোতে কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি নিশ্চিত করা গেলে খুচরায় ৬৫ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে। আলুর দাম এখনও হিমাগারেই ৪০ টাকার মতো। তা ছাড়া ডিমের পিস খামার পর্যায়ে সাড়ে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১ টাকায়। মাঝে পাইকারিসহ কয়েকটি হাত ঘুরে আসায় খুচরা ১২ টাকায় বিক্রি হবে কীভাবে? এ বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তবে অন্য কোনো সংস্থা তদারকিতে মাঠে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সফিকুজ্জামান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই বাজারে তদারকি করবে। কিন্তু ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়া কেউই বাজারে নামেনি। এত অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে সারাদেশে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা অনেক কঠিন। তার পরও চেষ্টা চলছে। ছুটির দিনও কাজ করছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।