শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিতঃ ২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১:১১ পূর্বাহ্ন


ঢাকা : মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ। গত বছরের জানুয়ারিতে বে ওভালে নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই ঘরের মাটিতে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে প্রথমবারের মত হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

ঐতিহাসিক সেই জয়ের দুই বছর না পেরোতেই আরও এক স্মরণীয় জয় পেলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর ঘরের মাটিতে দুই দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে কিউইদের আমন্ত্রণ জানায় টাইগাররা।

এ সিরিজেরই প্রথম টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে আজ সফরকারীদের উড়িয়ে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পেয়েছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

বাংলাদেশের দেয়া ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কাল চতুর্থ দিনে ১১৩ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। তবে জয় থেকে ৩ উইকেট দূরে থেকেই কাল দিনের খেলা শেষ করতে হয় টাইগারদের। অবশেষে কিউইদের শেষ ৩ উইকেটও আজ তুলে নিয়েছেন টিম টাইগার্স।

ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে যেতে পারত গতকালই। বিশেষ করে ৩৩২ রানের লক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ৬০ রানে নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল এই টেস্ট হয়ত পঞ্চম দিনের সূর্য দেখবে না। কিউই ব্যাটসম্যাদের বিপক্ষে মুহুর্মুহ আবেদন তুলছিলেন বাংলাদেশের বোলার–ফিল্ডাররা। কোনোটাতে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাচ্ছেন, কোনোটা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানের মনে।

ব্যতিক্রম ছিল কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মিচেলের প্রতিরোধের চেষ্টা। টম ব্লান্ডেল, গ্লেন ফিলিপস, কাইল জেমিসনরা ছোট ছোট সঙ্গত দিয়ে গেছেন তাঁকে। এই করে করেই এক শ পার, শেষে এসে ইশ সোধিকে নিয়ে তো মিচেল পার করে দিলেন দিনটাই। শেষ এক ঘন্টায় লড়াইটা হয়ে উঠেছিল এমন—বাংলাদেশ চায় নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে চতুর্থ দিনে ম্যাচ শেষ করতে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের পণ, ম্যাচ যে করেই হোক পঞ্চম দিনে নিতে হবে। এই নিয়ে কী হয় কী হয় একটা অবস্থায় পার হয়েছে শেষ বেলা। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দিন শেষে মিচেলের ৮৬ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের সুবাদে কাল ‘জয়’টা হয়েছে নিউজিল্যান্ডেরই। বাংলাদেশ তো অন্তত চার দিনে টেস্ট জিততে পারল না!

কে জানে, অদৃষ্টই হয়ত চেয়েছিল ভূমিকম্পের দেশের ক্রিকেটারদের হারের আগে একটু ‘হোম কন্ডিশনের’ মেজাজ দেওয়া যাক। কিন্তু সিলেট পর্যন্ত সেই মেজাজ খুব একটা এলো না। তার মধ্যেই শেষ দিনে এসে নিউজিল্যান্ডের নতুন লড়াই—শেষ ৩ উইকেটে যতদূর নিয়ে যাওয়া যায় টেস্টটাকে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল যথারীতি যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় টেস্ট, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পর সিলেটেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মেতে ওঠা যায় আরেকটি জয়োৎসবে।

সেই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট। প্রথম সাফল্যটা আসতে আসতেই ১০ম ওভার। ধৈর্য্যের পরীক্ষায় হার মেনে নাঈম হাসানকে সুইপ করেছিলেন ততক্ষনে অর্ধশত (৫৮) করে ফেলা মিচেল। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সেটাই দারুণ এক ক্যাচ হয়ে গেলে তাইজুল ইসলামের হাতে। ম্যাচটাকে পঞ্চম দিনে নিয়ে আসায় মিচেলের ১২০ বলে খেলা ৫৮ রানের ইনিংস এবং ইস শোধির সঙ্গে তাঁর ৩০ রানের রাত পার করা জুটিটাকে বিশেষভাবে মনে রাখবে নিউজিল্যান্ড। অবশ্য যদি তারা এই টেস্টটাকেই মনে রাখতে চায় আর কি!

এর ৮ ওভার পর দ্বিতীয় সাফল্যটা আসে সেই তাইজুলের হাত ধরেই, সাউদিকে শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানের ক্যাচ বানিয়ে। টেস্টে ১২তম পঞ্চম উইকেট পাওয়ার আনন্দে মাতা তাইজুল মাঠেই অভিনন্দন পেয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান ইশ সোধিরও। এর পর তাইজুলের আরেকটি উইকেটে ৭২তম ওভারের ১ম বলেই হয়ে যায় জয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইশ সোধির এই ক্যাচটাও নিয়েছেন জাকির। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে ৬ উইকেট সহ টেস্টে তাইজুলের উইকেট হলো ১০টি। এক টেস্টে ১০ উইকেট তিনি নিলেন এ নিয়ে দ্বিতীয়বার।

নিউজিল্যান্ড এই টেস্টের স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলেও বাংলাদেশের কাছে ঘরের মাঠে কিউইদের প্রথম হারানো টেস্টটা চিরস্মরণীয় হয়েই থাকবে। টেস্টে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়গুলোরই একটি হয়ে গেছে এটি। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত জেতা ১৮টি টেস্টের মধ্যে দেশের বাইরের ৬টিতে জিম্বাবুয়ে ছাড়াও জয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তার মধ্যে সেরা গতবছর জেতা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট। ঘরের মাঠে যদিও বাংলাদেশ হারিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে; তবু সব মিলিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে পাওয়া জয়টাই সবচেয়ে এগিয়ে।