একুশে প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে সামগ্রিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মূলত ঋণের মান কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি, প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তাদের আর্থিক ঝুঁকির মাত্রাও বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২৩’ থেকে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে। ব্যাংকগুলোর প্রধান আয় ঋণ বা বিনিয়োগের মাধ্যমে আসে, কিন্তু বর্তমানে ঋণের সুদ থেকে আয়ের হার কমতির দিকে।
২০২৩ সালে ঋণ ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। এছাড়া পরিচালনগত ঝুঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাজার ঝুঁকি কিছুটা কমে ৪৪ হাজার ৩৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়ে ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় দাঁড়ালেও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বৃদ্ধির হার বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিতরণকৃত ঋণের মান কমে যাওয়া, যার ফলে ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পড়ছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ার পরও ব্যাংকগুলোর নিট আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। প্রভিশন ও মূলধনের ঘাটতি মেটাতে যথেষ্ট পুঁজি সরবরাহ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
অর্থাৎ, ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা এবং রিজার্ভ তহবিল কম থাকায় তারা বড় ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা হারাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জলবায়ু ঝুঁকিও ব্যাংক খাতে প্রভাব ফেলছে, যদিও এই প্রতিবেদন এগুলো নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেনি।
মুদ্রাবাজারেও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমে গেছে। অনেক ব্যাংক আস্থার সংকটের কারণে অন্য ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালে এই বিনিয়োগ ছিল ৭৯ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে নেমে এসেছে ৭৬ হাজার ৭৭০ কোটি টাকায়। দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ বিনিয়োগ করলে তা সময়মতো ফেরত না আসার আশঙ্কায় ব্যাংকগুলো এখন সতর্কতার সঙ্গে মুদ্রাবাজারে বিনিয়োগ করছে না।
সব মিলিয়ে, ব্যাংক খাতে সম্পদের মানের অবনতি, প্রভিশন ঘাটতি এবং খেলাপি ঋণের বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকিং সেক্টর নানা সংকটে পড়েছে। ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা কমলেও ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতার অবস্থা এখনো অনেকটাই নড়বড়ে।