বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদ নিয়ে মতানৈক্য, রাজপথে নামছে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন

বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা বিশ্লেষকদের
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৯:৫১ পূর্বাহ্ন


‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত হতে না পেরে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল।

সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে তারা। দলগুলোর এই পদক্ষেপে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপি চাইছে, জুলাই সনদের সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সমাধান করতে। অন্যদিকে, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের দাবি, সনদের আইনি রূপ দেওয়ার পরই তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির কথা বারবার বলার পরও সমাধান হচ্ছে না। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে দাবি আদায় না হলে তো আন্দোলনের পথেই যেতে হবে। তাই আমরা কর্মসূচি দিয়েছি।”

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, “আমরা সংস্কার বা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো অগ্রগতি দেখছি না। এসব দাবি আদায়ের জন্যই আমরা রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছি।”

তবে সব দল একযোগে আন্দোলনে যাচ্ছে না। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পিআর পদ্ধতির সঙ্গে একমত না হওয়ায় পৃথক কর্মসূচির কথা জানিয়েছে। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাকি দাবিগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। তবে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছি না।”

জামায়াতসহ অন্য দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “যেকোনো রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে। জামায়াত যেসব কর্মসূচি দিয়েছে, তা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য দিয়েছে বলে মনে করি।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি অনুযায়ী কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু কমিশনের সঙ্গে তারা যেভাবে সহযোগিতা করছে, তা অব্যাহত আছে। আমরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি এবং আলোচনার মাধ্যমেই আমরা এক জায়গায় আসতে পারব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দলগুলোর রাজপথে নামার কর্মসূচিকে রাজনীতির জন্য নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “বিষয়টি সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে নিয়ে একসঙ্গে বসতে পারেন। কথা বললে এর সমাধান হবেই।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান মনে করেন, দলগুলো তাদের দাবির পক্ষে জনমত যাচাই করতে মাঠে নামছে।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন মনে করছেন, এর মাধ্যমে জামায়াত হয়তো বোঝাতে চাইছে যে, তারা সংস্কারের আগে নির্বাচন চায় না।