বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

বাংলাদেশে বন্দী ৯৬ হাতিকে বনে ফেরানোর পরিকল্পনা, ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প

‘প্রাকৃতিক স্বভাব হারানো’ হাতির ফেরা কি সহজ হবে?
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ৬:০০ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে বন্দী থাকা ৯৬টি হাতিকে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাতিদের বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে ফিরিয়ে এনে বনাঞ্চলে পুনর্বাসন করা হবে। এই তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। হাতিদের প্রতি ‘নিষ্ঠুরতা’ বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সায়েদা রিজওয়ানা হাসান।

মংগাবে এশিয়ার এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক আবু সিদ্দিক লিখেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে গড়ে ২৬৮টি বন্য হাতি রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় ‘অতিমাত্রায় বিপন্ন’ হিসেবে ঘোষিত। এই বন্য হাতিগুলো মূলত চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনে বাস করে। এর বাইরে দেশে ৯৬টি হাতি বন্দিদশায় আছে, যার মধ্যে ৮২টি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এবং ১৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে (যেমন চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ক) রয়েছে।

অতীতে কাঠ টানা, মাল পরিবহন ও সার্কাসে হাতি ব্যবহৃত হলেও ইঞ্জিনচালিত যানের কারণে সেই প্রয়োজন কমে গেছে। মংগাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন অনেক মালিক হাতিদের দিয়ে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের কাজ করাচ্ছেন। এই ধরনের কাজে ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত গরমে একটি হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। ২০২৪ সালে হাইকোর্ট বন্য প্রাণীর ওপর নিষ্ঠুরতা বন্ধে একটি নির্দেশনাও দেন।

সরকারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সায়েদা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “হাতির প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। এদের মালিকদের কাছ থেকে ফিরিয়ে এনে প্রথমে আলাদা একটি বনে রাখা হবে। পরে দেখা হবে তারা বনে মানিয়ে নিতে পারে কি না। ফলাফল যা–ই হোক, হাতিদের আর বন্দী রাখা হবে না।”

এই ৪০০ কোটি টাকার তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে হাতিদের অবস্থা নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা চালানো হবে। প্রকল্প পরিচালক এ এস এম জাহির উদ্দিন আকন বলেছেন, “বাংলাদেশে শেষ হাতি সমীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। এখন সংখ্যা বদলেছে কি না, জানতে আমরা আবার জরিপ করব।”

এ এস এম জাহির উদ্দিন আকন আরও জানান, “প্রাথমিকভাবে মৌলভীবাজারের রেমা-কালেঙ্গা আর চট্টগ্রামের চুনতি বন—এই দুই জায়গার মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া হবে হাতিদের নতুন আবাস হিসেবে। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নতুন। তাই আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিচ্ছি। শ্রীলঙ্কার হাতি পুনর্বাসনকেন্দ্রের মতো উদাহরণও আমরা বিবেচনা করছি।”

তবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ মন্তব্য করেছেন, “বন্দী হাতিরা তাদের প্রাকৃতিক স্বভাব অনেকটাই হারিয়েছে। মানুষের সংস্পর্শে থাকায় তারা নানা রোগও বহন করতে পারে।”

আবু সিদ্দিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হাতি ধরার ইতিহাস ব্রিটিশ আমল থেকে। তখন সেনা ও কাঠ পরিবহনের কাজে হাতি ব্যবহৃত হতো। ঢাকার হাতিরপুল, মাহুতটুলি ও হাতিরঝিলের মতো নামগুলো সেই সময়ের স্মৃতি বহন করছে। সরকার ২০১৮ সালে ১০ বছর মেয়াদি ‘এলিফ্যান্ট কনজারভেশন অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়েছিল এবং মানুষ-হাতি সংঘাত কমাতে ২০১০ সাল থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও চালু রেখেছে।