
২০১৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহৃত’ কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের (৪৬) মরদেহ ছয় বছর পর ফেনীতে পাওয়া গেছে। পুলিশ বুধবার ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরিবারের দাবি, অপহরণের পর মুক্তিপণ দেওয়া হলেও আহাদকে ফেরত পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, আহাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই এবং এটিকে প্রাথমিকভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ছিল, আহাদ দিনমজুরের কাজ করেন। তবে তার পকেটে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আসল পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ পরিবারকে খবর দেয়।
নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার ভূইগাঁও ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো. ইমানি মিয়ার ছেলে। তার স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগ দেন। সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন।
নিহত আহাদের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন বলেন, তার ভাই চট্টগ্রামে একাই থাকতেন এবং সেখান থেকেই নিখোঁজ হন। ২০১৯ সালের ৭ মে ভোরে তার ভাবিকে মুঠোফোনে জানানো হয় ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীদের তার ভাবি মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকাও দেন। তবে তার ভাইকে ফেরত পাওয়া যায়নি। নাঈমা নাসরিন দাবি করেন, তার ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন, তবে দলীয় কোনো পদে ছিলেন না। তার ভাইকে কেন অপহরণ করা হয়েছে বা কেন গুম করা হয়েছে, তা তারা জানেন না। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
নিহত আবদুল আহাদ ফেনীর ছাগলনাইয়ায় কীভাবে এলেন, তা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি এত দিন আহাদ কোথায় ছিলেন, এর কোনো ব্যাখ্যাও তারা দিতে পারেনি। পুলিশের দাবি, আহাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা।
নিহতের ভাগনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অপহরণের ঘটনার পর তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন এবং সংবাদ সম্মেলনও করেছেন, তবে তার মামার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি চান।
জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম বলেন, নিহত কাস্টম কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে ছয় বছর আগে অপহরণের যে বিষয়টি জানানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।