বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাস্তার উপর ডাস্টবিনের শো-রুম সাজিয়েছে চসিক’

প্রকাশিতঃ ৯ অগাস্ট ২০২০ | ৩:০৯ অপরাহ্ন


জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে নগরের বায়েজিদ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস সড়কটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ও উদ্বোধনের আগে উন্মুক্ত করে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

ব্যস্ত হয়ে উঠা উক্ত সড়কটির যত্রতত্র ডাস্টবিন রেখে ডাম্পিং জোনে পরিণত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক)। রাস্তাজুড়ে এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে ডাস্টবিন, আর আবর্জনা।

শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে ট্রাক ও পিকআপ পার্কিংয়ের নিরাপদ স্থান হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে এই সড়ক।

এমনকি সড়কের বহু অংশ থেকে এখনও সরানো হয়নি পাথর। এছাড়া সড়কের পাশে ৭ হাজার ৮৭২ মিটার স্লাবসহ ড্রেন নির্মাণ করার কথা প্রকল্পে উল্লেখ থাকলেও ড্রেনের বেশকিছু অংশে ছিল না স্লাব। ফুটপাতের অবস্থাও ছিল করুণ। যার ফলে সড়কটি ব্যবহারে যানবাহন ও পথচারীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

এ বিষয়ে বাইপাস সড়ক ব্যবহারকারী সারোয়ার করিম নামের এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘রাস্তার উপর একটা দুইটা ডাস্টবিন পড়ে থাকতে দেখেছি, কিন্তু এ রকম ডাস্টবিনের লাইন আগে কখনোই দেখি নি। অনেকে তো ঠাট্টা করে বলেও ফেলে রাস্তার উপর ডাস্টবিনের শো-রুম সাজিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।’

তিনি বলেন, ‘সড়কের পাশের ড্রেনের বিভিন্ন অংশে স্লাব প্রথম দিকে থাকলেও এখন সেগুলো উধাও হয়ে গেছে। আমার কথা হচ্ছে রাস্তার কাজ যদি চলমান থাকে তাহলে তা খুলে দেয়া হলো কেন? আর খুলে যখন দিয়েছে তখন এর ঠিকঠাক দেখাশোনা কেন করা হচ্ছে না?’

এদিকে গত শনিবার (৮ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের ডিভাইডারের বেশ কিছু অংশ রাস্তায় পড়ে আছে। সেগুলো না সরিয়ে ডিভাইডারের সামনে একটি লাঠিতে লাল কাপড় ঝুলিয়ে দায় সারতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)।

জাহাঙ্গীর সিরাজ পেশায় একজন সিএনজি চালক। এই সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে তার ভোগান্তির কথা বলেন একুশে পত্রিকাকে। তিনি বলেন, এই রোডে কয়েকমাস ধরে সিএনজি চালাচ্ছি। গত সপ্তাহ থেকে বেশ কিছু ডিভাইডার রাস্তায় পড়ে আছে। দূর থেকে দেখা যায় না, কাছে গিয়ে কড়া ব্রেক করে একবার কোন রকমে জানে বেঁচে ফিরেছি।

জাহাঙ্গীর আরও বলেন, এই রাস্তা নিয়মিত ব্যবহার করেন না এমন কেউ যদি গাড়ি চালান তাহলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। যদি এটা সমাধান করা হয় তাহলে আমরা নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারতাম।

জানতে চাইলে সড়কটির প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ একুশে পত্রিকাকে বলেন, এই সড়কের ৮৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। একটি রেলওভার ব্রিজের কাজ এবং টুকিটাকি কিছু কাজ চলমান রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় সড়কটির কাজ শতভাগ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা সড়কটিতে গাড়ি কন্ট্রোল করছি, সড়কের একটি লেনে আমরা বেরিয়ারও দিয়ে দিয়েছিলাম। হয়তো কিছুদিন আগে সেই বেরিয়ার তুলে দেয়া হয়েছে। আর ডিভাইডারের অংশ পড়ে থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি এখনই সমস্যাটি সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।

রাস্তায় পড়ে থাকা ডাস্টবিনের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, এলোমেলোভাবে রাস্তায় পড়ে থাকা এই ডাস্টবিনগুলো সিটি কর্পোরেশনের। আমরা বেশ কয়েকবার এই বিষয়ে তাদেরকে জানিয়েছি। যখন জানাই তখন দু’একটা ডাস্টবিন সরিয়ে নিলেও পরবর্তীতে আবার সড়কের উপর রাখা হয়। রাস্তাটি উদ্বোধন করার পর পুরোপুরি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলে আশা করছি তারা এই ডাস্টবিনগুলো সরিয়ে নেবে।

এদিকে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিচর্যার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাঁধে ন্যস্ত থাকলেও এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর ডাস্টবিন ও আবর্জনা রাখার বিষয়টি অনেকের কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না। ডাস্টবিনের গায়েও লেখা থাকতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নাম।

সড়কের যত্রতত্র ডাস্টবিন ও সড়কজুড়ে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বলেন, ‘চসিকের ডাস্টবিন ওই রাস্তার উপর কেন থাকবে সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। যদি নিতান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে পরিকল্পিতভাবে একটি ডাস্টবিন থাকতে পারে। এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনি যেহেতু আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন আমি খবর নিয়ে দেখবো, এই ডাস্টবিনগুলো চসিকের কি না। যদি চসিকের হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সরিয়ে নেয়া হবে।’

অন্যদিকে চসিক ও সিডিএ’র দায়িত্বহীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই এই ধরণের সমস্যাগুলো হচ্ছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান। একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখনও সড়কের কাজ শেষ হয়নি, তাই সিডিএ’র উচিত ছিল এখনই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত না করা। আর যেহেতু উন্মুক্ত করেই দিয়েছে সেহেতু সড়কটি দেখাশোনা করার দায়িত্ব তো তারা এড়িয়ে যেতে পারে না।’

নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান আরও বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার উপর ডাস্টবিন সিটি কর্পোরেশন রাখতে পারছে, কারণ আবর্জনা অপসারণ ও ডাস্টবিন স্থাপন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই। আর আইন না হলে এভাবে নগরে দায়সারা উন্নয়ন চলতে থাকবে, ফলে ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ জনগণ।’