
জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী এলাকায় পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহারের ঘর।
পাহাড় সাবাড়ের পাশাপাশি ৪ থেকে ৫ হাজার গাছ কেটে সেখানে এখন ৬০টি ঘর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। পাহাড়কাটা ও ঘর নির্মাণে কাজ করছে ২০ থেকে ২৫ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক।
পর্যাপ্ত সমতল জায়গা থাকার পরও রহস্যজনকভাবে রামুর পর উখিয়াতেও জীববৈচিত্র্য ও পাহাড় ধ্বংস করে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন (বাপা)।
তারা বলছেন, পাহাড় কাটার কারণে একদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ধমনখালী এলাকার বিশাল পাহাড় দুটি এস্কেভেটর দিয়ে কেটে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। অন্য পাশে চলছে, ঘর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। কর্মরত শ্রমিকরা জানান, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণের জন্য এ পাহাড় কাটছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) কক্সবাজার জেলা শাখার সহ-সভাপতি মোর্শেদুল আলম খোকন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড় ও গাছ কেটে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। যেভাবে পাহাড় আর গাছ কাটা হয়েছে- তা দেখে আমি রীতিমতো হতবাক।’
তিনি বলেন, ‘পাহাড় কাটার পাশাপাশি ৪ থেকে ৫ হাজারের মতো গাছকাটার কারণে একদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের এ মহান উদ্যোগটি প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।’ মোর্শেদুল আলম খোকন প্রশ্ন রাখেন, রক্ষক যদি নিজেই ভক্ষক হয় তাহলে পাহাড়ের এ কান্না থামাবে কে?

পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, ‘ওই জায়গাটি প্রথম স্থানীয় একজন ভূমিদস্যু দখল করে সেখানে পাহাড় কাটে। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তী তাকে উচ্ছেদ করে সেখানে মুজিববর্ষের ৬০টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বর্ষায় পাহাড় ধ্বসের আশংকার কারণে সেখানে থাকা টিলাটি সাবাড় করছে প্রশাসন।’
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই স্থানে ৬০ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে- তা সত্য। তবে কোন পাহাড় কাটা হচ্ছে না। হয়তো সেখানকার কোন পাহাড়খেকো পাহাড় কেটে প্রশাসনের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।’
উপজেলা প্রশাসনের নিয়োজিত এস্কেভেটর পাহাড় কাটছে- বিষয়টি জানানো হলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’