আজাহাদুল ইসলাম আরফাত, কুতুবদিয়া থেকে ফিরে : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যেতে পারে- এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৯০০ সালে এই দ্বীপটির আয়তন ছিল ৫৮ বর্গমাইল; আর এখন ১৮ বর্গমাইল।
বিগত একশ’ বছরে ৩০ বর্গ মাইল সাগরে বিলীন হয়ে গেছে- এই তথ্য গবেষণা করে বের করেছে কুতুবদিয়া সমিতি চট্টগ্রাম।
সংগঠনটির তথ্যমতে, ১৯০০ সালে দ্বীপটির আয়তন ছিল ৫৭ থেকে ৫৮ বর্গমাইল, ১৯০০-১৯৪৭ সালে ছিল ৪০ থেকে ৪২ বর্গমাইল, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ছিল ৩৪ থেকে ৩৫ বর্গমাইল।
১৯৬০ থেকে ১৯৭৭ সালে কুতুবদিয়ার আয়তন ছিল ২৬-২৭ বর্গমাইল, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৬ সালে ২২ থেকে ২৩ বর্গমাইল, ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ সালে ২০ বর্গমাইল এবং ২০১৫-২০১৭ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ বর্গমাইলে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উপকূলীয় ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কামাল হোছাইন বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে কুতুবদিয়া। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ কুতুবদিয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।’
তিনি বলেন, ‘কুতুবদিয়ায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নেই। স্থায়ী বেড়িবাঁধ থাকলে এখনকার মতো সাগরে বিলীন হয়তো হতো না। বিভিন্ন সময় সরকার উদ্যোগ নিলেও বেড়িবাঁধের কাজ পুরোপুরি হয়নি। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের কারণে অাজ কুতুবদিয়ার এই দশা।’
তিনি অারও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে কুতুবদিয়া দ্বীপের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।’
কুতুবদিয়া সমিতি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, ‘কুতুবদিয়াকে শুধু একটা দ্বীপ মনে করলে ভুল হবে। গভীর সমুদ্র বন্দর এবং পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনাময় স্থান কুতুবদিয়া। যেখানে অাছে লবণ, মৎস্য, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি।’
তিনি অারও বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে কুতুবদিয়ায় বাতিঘর স্থাপনের মধ্য দিয়ে জাহাজগুলোকে দিক-নির্দেশনা দেয়ার কাজ শুরু হয়।বছর দশেক আগে বাতিঘরটি বিলীন হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। পরে অবশ্য নতুন করে বাতিঘর তৈরীর মাধ্যমে এই কাজ চলছে।’
মজিবুল হক সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। বাড়ছে বন্যার ব্যাপকতা আর ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত কুতুবদিয়া দ্বীপটি সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও তীব্র স্রোতের কারণে ক্রমাগত ও দ্রুত ভাঙছে। প্রতিবছর জোয়ার-ভাটা আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে দ্বীপটি শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
কুতুবদিয়ায় স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান কুতুবদিয়া সমিতি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক সিদ্দিকী বাচ্চু।