বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

রাঙ্গুনিয়ায় ২ মাস ধরে পেন্টা টিকার সংকট, বিপাকে অভিভাবকরা

আবছার রাফি | প্রকাশিতঃ ৭ অগাস্ট ২০২৫ | ৫:৪৪ অপরাহ্ন


চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় টানা দুই মাস ধরে শিশুদের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার সংকট চলছে। ফলে সময়মতো টিকা দিতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অভিভাবকরা। পাঁচটি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত এই টিকা না পাওয়ায় শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েও সেবাপ্রার্থীরা কোনো নিশ্চিত তথ্য পাচ্ছেন না। কেউ কেউ বারবার ফিরে যাচ্ছেন, আবার কেউ ওষুধের দোকানে খোঁজ করছেন, যদিও নির্ধারিত কেন্দ্র ছাড়া এই টিকা বাইরে পাওয়ার সুযোগ নেই।

পদুয়া ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, দুই মাস আগে নবজাতক সন্তানের জন্য পেন্টা-৩ টিকা দিতে গিয়েছিলেন। তখন তাকে জুলাই মাসে আসতে বলা হয়। জুলাইতে টিকা না পেয়ে আবার আগস্টের শেষে যোগাযোগ করতে বলা হলে তিনি এখনো টিকা পাননি। তিনি বলেন, “এই অনিশ্চয়তায় আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি। বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে এর দায় কে নেবে?”

এই ভোগান্তি শুধু পদুয়াতেই নয়, উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের টিকাকেন্দ্রেই একই অবস্থা। একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, টিকাকর্মীরা নিজেরাও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। টিকা কবে আসবে, এ নিয়ে কেবলই আশ্বাস আর অপেক্ষা।

টিকাসংকটের বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাব জামিল বলেন, “গত দুই মাস ধরেই সংকট চলছে। আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকাটি দিতে পারিনি। জুনের শেষ দিকে কিছু টিকা এসেছিল, তখন যারা কেন্দ্রে এসেছেন তাদের দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেকেই পায়নি। আবার সরবরাহ এলে বাকিদের দেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। গত পরশু সিভিল সার্জন অফিসের ইপিআই প্রধানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেননি, তবে চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।”

পেন্টা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের বিষয়ে ডা. জয়নাব জামিল আশ্বস্ত করে বলেন, “টিকা দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। আমরা সাধারণত এক মাস পরপর দিতে বলি। এক মাস পার হওয়ার পর দিলেও টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয় না। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শিশুর দশ মাস বয়স পর্যন্ত যেকোনো সময়ে এই টিকা দেওয়া যাবে।”

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, “পেন্টা ভ্যাকসিনের স্বল্পতা রয়েছে। আমাদের যা চাহিদা, সরবরাহ আসছে তার চেয়ে কম। গত মাসে প্রায় ৩০ হাজার ডোজ এসেছিল, যা সিটি করপোরেশনসহ ১৫টি উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। গত মাসের ২৮ তারিখ নতুন চালান আসার কথা থাকলেও এখনো আসেনি। আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি; টিকা ঢাকায় পৌঁছেছে বলে জানতে পেরেছি। ভ্যাকসিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া শেষ করে দু-একদিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।”

এবারের চালান চাহিদা অনুযায়ী আসবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মাঝখানে দেশব্যাপী স্বল্পতা থাকায় কম করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার আমাদের চাহিদা অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আমাদের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে।”

বিলম্বের কারণে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, “এতে কোনো জটিলতা হবে না। আমাদের টিকার হিসাব প্রান্তিক অনুযায়ী করা হয়। গত প্রান্তিকে চট্টগ্রাম জেলা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভাগে ভালো অবস্থানে ছিল। শুধু গত মাসে দেশব্যাপী সরবরাহ কম থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। আশা করি, আমরা দ্রুতই এই ঘাটতি পূরণ করতে পারব।”

প্রসঙ্গত, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সী শিশুদের ১০টি রোগ প্রতিরোধে ৭ ধরনের টিকা দেওয়া হয়। টিকাগুলো হলো—বিসিজি, ওপিভি বা পোলিও, আইপিভি, পিসিভি, পেন্টাভ্যালেন্ট এবং এমআর-১ ও এমআর-২।