
সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। এই দুই রোগের জোড়া আঘাতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি রোগ শনাক্তকরণের জটিলতায় বাড়ছে ভোগান্তি।
এর মধ্যেই বিশেষজ্ঞরা এডিস মশাবাহিত তৃতীয় ভাইরাস ‘জিকার’ উপস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। অন্যদিকে, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনগুলোর ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা দায়িত্ব পালনে সক্রিয়।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়া দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। পরীক্ষার ফল আসতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যাওয়ায় অনেক সময় ভুল চিকিৎসাও হচ্ছে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে।
ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল ডা. তানভীর আহমেদ জানান, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের প্রায় ৩০ শতাংশই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত।
রোজিনা ইসলাম এর একটি উদাহরণ। জ্বরের পর পায়ে তীব্র ব্যথা নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তাকে নিউরোলজিক্যাল সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে পরীক্ষায় তার চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে এবং সঠিক চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. হালিমুর রশীদ বলেন, চিকুনগুনিয়ায় শরীরের জয়েন্টগুলোতে বেশি ব্যথা হয়, যা ডেঙ্গুর চেয়ে ভিন্ন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ থাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “এ বছর শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ প্রায় সব এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ছড়িয়েছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামে ৪ জন জিকা আক্রান্ত রোগীও শনাক্ত হয়েছে। সঠিক পরীক্ষার অভাবে অন্য কোথাও এটি ছড়িয়েছে কিনা, তা জানা যাচ্ছে না।”
আরেক কীটতত্ত্ববিদ ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, “এডিস মশা জিকা ভাইরাসও ছড়ায়, যা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা তৈরি করে। এবার চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত অনেকের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাই তারা জিকায় আক্রান্ত নন, সেটিও নিশ্চিত হওয়া দরকার।”
তাদের মতে, এডিস মশাবাহিত ভাইরাসের এই প্রকোপ নভেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে।
মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন দুজনই দাবি করেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের বহুমুখী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খান বলেন, সারা দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়মিত মশক নিয়ন্ত্রণ এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।