
সরকারি ঋণের সুদের চাপ কমাতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার আবারও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন সুদহার কার্যকর হতে পারে, যা বর্তমানের চেয়ে প্রায় দেড় শতাংশ কম হবে বলে জানা গেছে।
এই পদক্ষেপে সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হলেও বিপাকে পড়বেন অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকসহ ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা, যারা মূলত সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এখন চড়া সুদের সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে কম সুদের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ কমেছে। নিট বিক্রির এই ঋণাত্মক ধারা কয়েক বছর ধরেই চলছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “সরকার ট্রেজারি বিল-বন্ড থেকে সস্তায় ঋণ পাবে, যা সরকারের জন্য ভালো। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য এটি চাপ সৃষ্টি করবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী মনে করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার ফলে বয়স্ক এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
একইভাবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে। নতুন করে সুদ কমালে মানুষ ভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসির নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তারা সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনছে, যার সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি, যা সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশ কম।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, সরকার বিকল্প বিনিয়োগের উৎস থাকায় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং মানুষকে ট্রেজারি বন্ডের দিকে উৎসাহিত করতে চাইছে।
তবে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “এখন যেহেতু মূল্যস্ফীতির হার কমে ৭ শতাংশে এসেছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই সুদের হার কমানো উচিত। না হলে সরকার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না।”
এর আগে ২০২১ সাল থেকে কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে।