বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

বাড়ি ভাড়া ১৫% করার সম্মতিতে এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২১ অক্টোবর ২০২৫ | ৬:৫৩ অপরাহ্ন


বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ করার সরকারি সম্মতিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন আজিজী মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপন হাতে পেয়ে এই ঘোষণা দেন। দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। আমরা আগামীকাল থেকেই ক্লাসে ফিরে যাব।’

দীর্ঘ ১০ দিনের আন্দোলনের পর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী নভেম্বর মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ (৭.৫ শতাংশ) বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা পাবেন। আগামী বছরের জুলাই থেকে তারা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা পাবেন। তবে তাদের চিকিৎসা ভাতা (১,৫০০ টাকা) ও উৎসব ভাতা (মূল বেতনের ৫০ শতাংশ) আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে।

এই সিদ্ধান্ত হাতে পেয়েই এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহার এবং বুধবার থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা দেন।

অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের ফলে কোনো বকেয়া সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম হলে বিল অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন এবং এমপিও নীতিমালা ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগের শর্তাবলি পূরণ করতে হবে।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুপুরে অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র হস্তান্তর করেন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, ‘বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি বাস্তবসম্মত ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। শিক্ষকরা আমাদের সমাজ ও জাতি গঠনের মূল চালিকা শক্তি, অথচ তাদের বেতন-ভাতা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রতুল ছিল।’ অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অর্থনৈতিক বাস্তবতা সীমিত হলেও আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলাম এবং আছি। ধীরে ধীরে তাদের সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।’

অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার আমাদের কথা শুনেছেন, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশা করি, উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং বদলি প্রক্রিয়া চালুর বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে।’

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আগে মাসে ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পরে ১৬ অক্টোবর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের সেই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে ১২ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন।
শিক্ষকদের এই কর্মসূচিতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন।