বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

‘কানাডার’ স্বপ্নে গিয়ে নেপালে জিম্মি, উদ্ধারের পর মিলল ভয়ংকর বর্ণনা

অস্ত্রের মুখে ‘কানাডায় পৌঁছেছি’ বলতে বাধ্য করা হয় জিম্মিদের, ব্র্যাকের সতর্কবার্তা
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২ নভেম্বর ২০২৫ | ২:৩৫ অপরাহ্ন

কানাডা বা ইউরোপে পাঠানোর নামে বাংলাদেশি তরুণদের নেপালে নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে একটি মানব পাচার চক্র। ‘কানাডায় পৌঁছানোর পর টাকা’—এমন প্রলোভনে ফেলে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি এভাবে প্রতারিত সিলেটের তিন তরুণকে উদ্ধারের পর, নেপাল রুট ব্যবহারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, সম্প্রতি সিলেটের তিন তরুণকে কানাডায় পৌঁছানোর পরই সব খরচ পরিশোধের প্রলোভন দেখানো হয়। গত ১৩ অক্টোবর ওই তিনজনকে নেপালে নেওয়া হয় এবং একটি হোটেলে রেখে তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। চক্রটি জিম্মিদের পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ও টিকিট লাগিয়ে সেই ছবি পরিবারের কাছে পাঠায়। এরপর কানাডার একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলে। পরবর্তীতে প্রত্যেকের কাছে আরও ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

পরিবার কথা বলতে চাইলে জিম্মিদের অস্ত্রের মুখে কথা বলতে বাধ্য করা হয় যে, “আমরা কানাডায় পৌঁছে গিয়েছি। কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” কিন্তু একজনের পরিবারের সন্দেহ হলে তারা স্থানীয় দালালের কাছে ঘটনা জানান এবং বলেন, তাদের পরিচিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিলেই ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হবে। ব্র্যাক জানিয়েছে, তখন পাচারকারীরা টালবাহানা শুরু করে এবং নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দ্রুত টাকা চায়।

ব্র্যাক জানিয়েছে, পরিবারগুলো গত ২৬ অক্টোবর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) ও নেপালে যোগাযোগ করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হলে সে দিন রাতেই পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে স্থানীয় একজন দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের খবর নেপালে পাচারকারীদের কাছে পৌঁছালে তারা ওই দিন রাত ৩টার দিকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের পাশে ওই তিনজনকে ছেড়ে দেয়। ৩০ অক্টোবর তাঁরা ঢাকায় ফিরলে ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম তাঁদের সহায়তা করে এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জবানবন্দি নেন।

ব্র্যাক বলছে, শুধু কানাডা নয়; ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নেওয়ার কথা বলে নেপালে নিয়ে একইভাবে নির্যাতন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নেপালে ভিসা লাগে না এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়, তাই পাচারকারীরা এই রুটটি বেছে নেয়।

ব্র্যাকের শরিফুল হাসান জানান, ‘কানাডায় পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ করা যাবে’—এমন প্রলোভনের ফাঁদে অনেকেই পড়ছেন। তিনি বিদেশগামীদের সচেতন হওয়া এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানান। ব্র্যাক আরও জানিয়েছে, বিদেশে বিপদে পড়া যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করলে আন্তর্জাতিক ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের সহায়তা করা হবে।