মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ, পেকুয়া : নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য নদী। এই নদীর শাখাগুলো বয়ে গেছে এদেশের বিভিন্ন জনপদ দিয়ে। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কবলে পড়ে এসব নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীতে জেগে ওঠা চর দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়ি।
কক্সবাজারের পেকুয়ার ভোলা খালে গিয়ে দেখা মেলে এমন দৃশ্য। এটি দখল দূষণে এখন মৃতপ্রায়।
স্থানীয়রা জানান, চকরিয়া উপজেলার পহরচাঁদা সারের গুদাম এলাকায় মাতামুহুরি নদী থেকে সৃষ্ট এ শাখা নদী পেকুয়া বাজারের পাশ ঘেঁষে কাটাফাঁড়ি ব্রিজ এলাকার মোহনায় মিলিত হয়েছে। সেখান থেকে মগনামা বাজার পাড়ার পাশ দিয়ে একটি শাখা গিয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেলে মিলিত হয়। আরেকটি শাখা উজানটিয়া সোনালী বাজারের পাশ দিয়ে মাতামুহুরির সাথে মিলিত হয়েছে। খরস্রোতা ভোলা খাল একসময় এ অঞ্চলের প্রাণ ছিল। মূল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছিল এ নদীকে ঘিরে।
কিন্তু সম্প্রতি এ খাল দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতেছে ভূমিদস্যুরা। এই খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মৎস্য ঘের ও বসতভিটা। সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত এবং প্রবহমান এই খালটির প্রাণ কেড়ে নেওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। কেননা প্রতি বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি ভাটার দিকে নেমে যায়।
এ অবস্থায় খাল ভরাট করে দখলে নেওয়ায় বাধাগ্রস্ত হবে পানি নিষ্কাশন। তাই বর্ষা মৌসুমে বন্যার আশংকা স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে গ্রামের পর গ্রাম বানের পানিতে ভাসবে বলে অভিমত তাদের।
শনিবার (৫ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, ভোলা খালের দু’পাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। মাছের প্রজেক্ট করার নামে দখল করা হয়েছে খাল। তাছাড়া এ খালে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন বাজারের কসাইখানার গোবর, কাঁচাবাজারের আবর্জনা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য, ইট-মাটির জিনিসপত্র এবং রেস্তোরাঁর আবর্জনা, চাতালের ছাই। খালের পাশে থাকা বসতি এবং বিভিন্ন বাজারের নালা এবং অনেকগুলো শৌচাগারের সংযোগ খালে দেওয়া আছে। এতে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরও এর পানি রেস্তোরাঁ ও বাসাবাড়িতে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এই খাল দিয়ে পণ্যবাহী ট্রলার যাতায়াত হয় নিয়মিত। তবে অতীতের মত বড় ট্রলারগুলো আসা যাওয়া করতে পারে না। দু’পাশে দখলের ফলে খালের মূল চ্যানেল ইতিমধ্যে সরু হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নেছার আহমদ জানান, এই নদীগুলো দিয়ে একসময় কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও মাতারবাড়ির বেশির ভাগ মালামাল আনা-নেওয়া হতো। এসব এলাকার মানুষ যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতো এ নদীপথ। পেকুয়ায় উৎপাদিত লবণ বিক্রির জন্য এই নদীকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি ব্যবসার কাজে আজ থেকে ৭ বছর আগেও ট্রলারে করে মাতারবাড়ি যাতায়াত করতাম। কিন্তু এখন চাইলেও তা সম্ভব না।
পরিবেশকর্মী ইমরান হোসাইন বলেন, নদীমাতৃক এই দেশে ছোট বড় যে কোনো নদীর নাব্যতা হারাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। দীর্ঘ বছর খননের উদ্যোগ নেয়া হয় না। এতে খাল দখলের প্রবণতা বেড়েছে। ভোলা খালের সাথে পেকুয়ার মানুষের গভীর সম্পর্ক। এই নদীর পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কয়েক হাজার একর জমির চাষাবাদ হয়। তাই ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ভোলা খালের দখলকৃত অংশ উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
এব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইকা শাহাদাতকে একাধিকবার কল দেওয়ার পরেও ফোনে পাওয়া যায়নি।