বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইনানী সৈকত দ্বিখন্ডিত করে জেটি, স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ হুমকির মুখে

প্রকাশিতঃ ৬ অক্টোবর ২০২০ | ৮:৫৬ অপরাহ্ন


জসিম উদ্দীন, কক্সবাজার : কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত। আইন অনুযায়ী সেখানে কোন স্থাপনা তৈরি করা অবৈধ। তবুও কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতের টিউলিপ হোটেলের পশ্চিম পাশে সৈকত দ্বিখন্ডিত করে যাত্রী টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সমুদ্র তীর ভেঙে হুমকিতে পড়বে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ। এছাড়া সৈকত দ্বিখন্ডিত হয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মর্যাদা হারাতে পারে কক্সবাজার।

এ নিয়ে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। জেটি নির্মাণ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপিও প্রদান করেছেন তারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ও প্রবীন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেলের পশ্চিম পাশে সৈকত থেকে বালি নিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করে জেটি নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি নজরে আসার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে, এ বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য মেলেনি।

তিনি বলেন, কক্সবাজারসহ দেশের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) কোন স্থাপনা বা বাঁধ নির্মাণ আইনত অবৈধ। ইসিএ এলাকা হওয়ার পরও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান জেটি নির্মাণ বন্ধে এগিয়ে আসেনি। তাই আমরা জেটি নির্মাণস্থলে গিয়ে মানববন্ধন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি।

এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হলরুমে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্যাপ্টন শাহ আলম, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নৌবাহিনীর প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন শাহ আলম বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া আয়োজনের প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে প্রায় ৩৫ টি দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা অংশ নিবেন। প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি উক্ত নৌ মহড়া উদ্বোধন করে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করার কথা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মহড়ায় অংশ নেয়া জাহাজে যেতে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে সৈকতে একটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জেটি নির্মাণ অনুমোদন দিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ এখনো লিখিত অনুমতি দেননি। তবে প্রায় সব দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, চট্টগ্রামের একটি কোম্পানি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ নামাচ্ছে। এর পেছনে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বর্তমানে কর্মরত অনেকে রয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, নৌবাহিনীকে সামনে রেখে জেটিটি নির্মাণের পর সে কোম্পানি এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহারের ফন্দি করেছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন বা বিধিবদ্ধ কোন সংস্থা ইসিএ ঘোষিত এলাকায় জেটি নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে না। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এমন কাজ আইন-আদালতের প্রতি অবমাননার সামিল।

পনিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা সভায় জানান, জিও ব্যাগের বালি ভরে জেটি নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধের উভয় পাশে একপ্রকার পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সরকারবিরোধী নয়, তবে আইন মেনে সৈকতের অখন্ডতা রক্ষা করে জেটি নির্মাণ হোক সেটিই আমাদের দাবি।

বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারি পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন, পরিবেশ আইনে ইসিএ এলাকায় কোন অবকাঠামো ও বাঁধ নির্মাণে বাধা রয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইনানী সৈকতে বাঁধ নির্মাণে কাউকে অনুমোদন দেয়া হয়নি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা সৈকতকে দ্বিখন্ডিত করার প্রক্রিয়া বন্ধে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল’র সহযোগিতা চাইলে তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেল এলাকায় নির্মিতব্য জেটি পরিদর্শনে যান।

সেখানে গণমাধ্যমকে সাংসদ কমল বলেন, যেহেতু কক্সবাজার একটি ইসিএ এলাকা সেহেতু সৈকতে বালির রাস্তা তৈরি হলে সমুদ্র রাক্ষুসে রূপ ধারণ করতে পারে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়কটিও।

তিনি বলেন, মেরিন ড্রাইভ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া সম্পন্ন করতে উখিয়া এবং রামুর সংযোগস্থল সোনারপাড়া রেজুখাল মোহনাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ইতিপূর্বেও উক্ত মোহনায় বড় জাহাজ নোঙ্গর করার সক্ষমতা প্রমাণ হয়েছে। এটি একটু ড্রেজিং করা হলে সেখানে একটি স্থায়ী নৌ-ঘাটি ও জেটি নির্মাণ করা যেতে পারে। যা ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো যাত্রী নিয়ে এখান থেকে চলাচল করতে পারবে। আমি বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, রাষ্ট্রীয় আয়োজন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নিয়ে করা বাঞ্ছনীয়। অনুমতিহীন যে কোন কাজই আইন পরিপন্থি।