শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় শিক্ষা ভাবনা : কোথায় মিলবে, কার কাছে মিলবে উত্তর?

প্রকাশিতঃ ১০ জানুয়ারী ২০২১ | ১২:৩৬ অপরাহ্ন


কাজী খাইরুন নেছা : এপ্রিল-মে মাস। কলেজ-শিক্ষকদের অন্যরকম মাস। এই দুই মাস অনেক বেশি ব্যস্ততা। ক্লান্তি আবার স্বস্তি। এসময় কলেজ-শিক্ষকরা একাদশের বার্ষিক, এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা, হলে ডিউটি, পরীক্ষার খাতা পর্যবেক্ষণ, আবার ফাইনাল পরীক্ষার খাতা পর্যবেক্ষণের জন্য শিক্ষা বোর্ডের আমন্ত্রণ। সেই আমন্ত্রণে নানা কলেজের শিক্ষকদের সাথে একটা প্রীতিময় সম্মিলন ঘটে। যতই বলি ক্লান্তি, কষ্ট- তবুও সবার সাথে দেখা হয় বলে সত্যিই এটা একটা ভালোলাগার সম্মিলন, ভালোবাসার মাহেন্দ্রক্ষণ।

পরিদর্শক হিসেবে, পর্যবেক্ষক হিসেবে যখন আমরা খাতাগুলো পর্যবেক্ষণ করি, সব কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে আবার নতুন করে মতবিনিময় হয়। ভাবের আদানপ্রদান-কষ্ট ক্লান্তি দূর করে দেয় নিমিশে।

কাজ শেষে খাতা পর্যবেক্ষণের যে সম্মানি পাই, সেটাও আমাদের অনেক উপকারে আসে। মনে হয় সম্মান ও সম্মানি দুটিরই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আর যেসব শিক্ষক ক্লাসের বাইরে টিউশনি করান না, সম্মানিটা তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক সহকর্মীকে চিনি, যারা সম্পূর্ণ নিজের পরিশ্রম করা টাকা বলে এই টাকা থেকে দান করতে পছন্দ করেন।

যেটা বলছিলাম শিক্ষাবোর্ডে আমাদের মিলনমেলা, মতবিনিময়, পর্যবেক্ষক হওয়ার সুযোগ-সব কিছু থেকে বঞ্চিত করলো করোনার থাবা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ১১ এপ্রিল এল ক্লাস করার নোটিশ। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক, নব্বই আর বিংশ শতকের যারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের সাথে জড়িত, তাদের কাছে অতি প্রিয়মুখ প্রফেসর ড. গোলাম ফারুক।

এমন এক সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ-ছাত্রছাত্রীরা আপনাআপনিই ক্লাস করতে রুটিনে খুঁজে কোথায় স্যারের নাম। সাহিত্যকে বিভিন্ন রূপে উপস্থাপন করা স্যারের আশ্চর্য সৃষ্টি। অনেক গুণ স্যারের, যা আমি লিখে শেষ করতে পারব না। তবে এটকু বলতে পারি, শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশ-বিদেশে একজন খ্যাতিমান শিক্ষক, শিক্ষকতার বাতিঘর তিনি।

যখন মাউশির মহাপরিচালক হিসাবে স্যারের নাম দেখি, ভাললাগায় বুক ভরে ওঠে। সে যাই হোক, সেই স্যারের অফিস থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার নোটিশ চলে এল। তখন নিজেদের ভিতরের চেষ্টা যেন আরো বেড়ে গেল।

শুরু হয়ে গেল প্রযুক্তির ব্যবহার। আমি নিজে হোয়াটসঅ্যাপ বা জুম কী জিনিস জানতাম না! কিন্তু না জানলে চলবে না! শিক্ষক আমি। আমাকে ব্যবহার করা শিখতে হবে। আমি না জানলে ছাত্রদের কেমনে শিখাবো! সরকার শুরু করে দিল আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ। জেলা প্রতিনিধি নির্বাচন, বিভিন্নভাবে প্রযুক্তিগতভাবে সাহায্য করা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার যেন আরও বেগবান হয় সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করল সরকার।

সরাসরি প্রযুক্তির এত ব্যবহার আমাদের দরকার হত না তেমন। তাই বলে এখন প্রয়োজনের সময় বসে থাকা যাবে না। এখানে চলে আসে আমাদের মাননীয় অধ্যক্ষ আ ন ম সারোয়ার আলম স্যারের কথা, যিনি আধুনিক এমইএস কলেজের রূপকার। আমাদের উৎসাহ দিয়ে গেলেন অবিরাম। চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন কীভাবে আমরা শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাসের সাথে পরিচিত হতে পারি, কোন প্রযুক্তি আমাদের সহজ করবে দ্রুত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে। একজন দক্ষ অভিভাবকের ভূমিকায় তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্রিয় অধ্যক্ষের ভূমিকা পালন করতে লাগলেন। আজকের এই লেখায় কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই স্যারকে।

এদিকে, মাউশির সাথে শুরু হল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ। ক্লাস শুরু করতে হবে অনলাইনে। কলেজের অনলাইন ক্লাসের শুরুতে আমরা অনুসরণ করতে লাগলাম অধ্যাপক বাহার উদ্দিন মোহাম্মদ জুবায়ের, বিভাগীয় প্রধান হিসাববিজ্ঞান।

এত সুন্দর, চমৎকার উপস্থাপন স্যারের-সবাইকে ক্লাস রুমে নিয়েই ছাড়লেন। প্রত্যেকে একবার করে হলেও স্যারের ক্লাসে ঢুঁ মারেন। হিসাববিজ্ঞানের না হয়েও স্যারের পাঠদান, উপস্থাপন-কৌশলে মনে হত আমিও যেন হিসাববিজ্ঞান পড়ুয়া।

এই হলো শিক্ষকদের চেষ্টা। একজন স্যার এত ভালো পড়াচ্ছেন বলে অন্যজন কিন্তু থেমে নেই। প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ, সর্বস্ব দিয়ে ক্লাস শুরু করে দিলেন। মাস শেষে একটা খবর আবার উৎকন্ঠার কারণ হয়ে হাজির হল-কিছু প্রাইভেট স্কুল-কলেজ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা।

এমনিতেই আমাদের যাপিত জীবনে করোনা একের পর এক অজানা আতঙ্ক নিয়ে হাজির হচ্ছে রোজ। সেখানে আবার বেতন-অনিশ্চয়তা, সংসারের খরচ, টানাপোড়েন। দিন দিন শুধুই অশনি সংকেত। কোথায় মিলবে, কার কাছে মিলবে এসবের উত্তর? (চলবে)

কাজী খাইরুন নেছা : সিনিয়র প্রভাষক, ওমর গণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।