শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রহস্যজনক আগুনে পুড়লো সেন্টমার্টিনের কেয়াবন

প্রকাশিতঃ ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ | ৯:১২ অপরাহ্ন


কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত কেয়াবনের কিছু অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। আগুন লাগার এ ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়দের কেউ কেউ।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ একুশে পত্রিকাকে জানান, গত সপ্তাহে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘিরে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগমের সময়টিতেই কেয়াবনে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে।

দ্বীপের দক্ষিণে গলাচিপা নামক এলাকায় রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব অফিস। মেরিন পার্ক নামের এই অফিসের সীমানার পাশেই কেয়াবন গড়ে তোলা হয়েছে। অফিসের পূর্ব দিকের সেই কেয়াবনটি রহস্যজনক আগুনে পুড়ে গেছে।

চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ বলেন, একেবারে দিনের বেলা কেয়াবনে আগুন লেগেছিল। অথচ সেখানে রাতদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা থাকেন। তাই অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি পরিকল্পিত কিনা তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমি দাবি জানাই।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বালির বন্ধন তৈরি, মাটির ক্ষয়রোধ ও সামুদ্রিক বাতাসের তীব্র প্রবাহ ঠেকাতে উপকূলীয় অঞ্চল সুরক্ষায় কেয়াগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এই কেয়াগাছের বনই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির জনবসতি রক্ষা করে চলেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারাও এটা মনে করেন।

কিন্তু দ্বীপ রক্ষাকারী সে কেয়াবনই এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ অবস্থায় সম্প্রতি দ্বীপে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসের পাশেই কেয়াবন আগুনে পুড়ে গেছে। একই সাথে পুড়ে গেছে ওই দ্বীপে কর্মরত কোস্টগার্ড বাহিনীর অফিস সংলগ্ন কেয়াবনও।

সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, দ্বীপটিকে ঘিরে নানানমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এরই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে কেয়াবনে আগুন দেয়া হয়েছে। কারণ সবাই জানে কেয়াবন বিলুপ্ত হয়ে গেলে সেন্টমার্টিন ভাঙনের মুখে পড়ে তলিয়ে যাবে।

পর্যটন ব্যবসায়ী মো. আমিনুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পিতভাবে কেয়াবন নিধন করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য নষ্ট করা গেলে পর্যটকদের যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশনের লে. কমান্ডার আরিফ একুশে পত্রিকাকে বলেন, আগুন লাগার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। কারও সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত নাকি পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়া হয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কেয়াবনে আগুন লাগার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ সেন্টমার্টিন অফিসের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

তবে হারুন রশিদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

কেয়াবনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি প্রথম আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এর আগে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি খোঁজ নিচ্ছি। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি পরিকল্পিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে আগুন লাগা ছাড়াও গত দুই বছরে নানা কারণে দ্বীপ রক্ষায় ভূমিকা রাখা কেয়াবনের প্রায় ৮০ ভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে।