শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফুটপাতের জায়গা ভাড়া দিলেন চসিকের সাবেক প্রশাসক সুজন!

প্রকাশিতঃ ১৩ এপ্রিল ২০২১ | ৬:২১ অপরাহ্ন


মোহাম্মদ রফিক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে কে সি দে রোডের ফুটপাতের জায়গা ইজারা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৮ জানুয়ারি জানে আলম নামে এক ব্যক্তিকে চসিকের পাবলিক টয়লেটের পশ্চিম পাশে ৩৭৬ বর্গফুট আয়তনের জায়গাটি তিনি ইজারা দেন। এই জানে আলম বাকশাল নেতা এবং চসিকের সাবেক প্রশাসক সুজনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগ আছে, অখ্যাত কোনো এক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেলামি এবং মাসিক ৩ হাজার ৭৫০ টাকা ভাড়ায় ফুটপাতের জায়গাটি জানে আলমকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রশাসক হিসেবে বিদায় নেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে জায়গাটি বরাদ্দ দেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করে চসিকের রাজস্ব বিভাগ।

এদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ফুটপাতের জায়গা নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দেয়ায় চসিকের সাবেক প্রশাসক এবং নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এ নেতার ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

আজ মঙ্গলবার কে সি দে রোডে সরেজমিন গিয়ে ফুটপাতের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পায় একুশে পত্রিকা। দেখা যায়, বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ, চট্টগ্রাম অফিসের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে কে সি দে রোডে বিদ্যমান চসিকের পাবলিক টয়লেটের পশ্চিম পাশে ৩৭৬ বর্গফুট আয়তনের ফুটপাতের জায়গাটি টিন দিয়ে ঘেরা। এ ঘেরার ভেতরে আরসিসি পিলার এবং ইটের গাঁথুনির কাজ করছেন ৩ থেকে ৪ জন নির্মাণশ্রমিক।

এ সময় সেখানে শ্রমিকদের ‘মাঝি’ পরিচয়দানকারী আবুল কালাম নামে এক যুবক একুশে পত্রিকাকে জানান, গত সোমবার থেকে ৪ তেকে ৫ জন শ্রমিক নিয়ে তিনি সেখানে চারটি দোকান ঘর তৈরির কাজ করছেন।

পরিচয় গোপন রেখে এ প্রতিবেদক একটি দোকান ভাড়া নেয়ার আগ্রহের কথা জানালে আবুল কালাম বলেন, ‘ভাই কাল থেকে লকডাউন। কখন কাজ শেষ করতে পারবো জানি না। দোকান তৈরির কাজ শেষ হলে আপনি (প্রতিবেদক) মালিকের সাথে যোগাযোগ করবেন।’

এ প্রতিবেদক দেখতে পান, বিটিআরসি অফিসের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে কে সি দে রোডের ফুটপাতের প্রায় ৮ ফুট জায়গা দোকারঘর নির্মাণের জন্য উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। টিনের সাথে ঝুলছে একটি ডিজিটাল ব্যানার। এতে লেখা আছে, ‘নির্মাণ কাজ চলিতেছে, সাবধানে যাতায়াত করুন, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।’

দেখা গেছে, পথচারীরা চলাচল করছেন মূল সড়ক ধরে। চসিক পাবলিক টয়লেটটিও নির্মিত হয়েছে কে সি দে রোডের ফুটপাতের জায়গা দখল করে। শুধু পাবলিক টয়লেট নয়, এটির পূর্বপাশে কাটা পাহাড় লেইনে যাওয়ার মুখ পর্যন্ত ও সিনেমা প্যালেস নতুন বাস স্টেশন পর্যন্ত ফুটপাতের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অন্তত ৩০-৩৫টি দোকান।

জানা গেছে, জায়গাটির দরপত্র দাখিলের তারিখ ছিল ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি। চসিক বরাদ্দ সংক্রান্ত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানে আলমকে আগামী এক বছরের জন্য সেলামি ও মাসিক ভাড়ায় জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় চসিকের রাজস্ব বিভাগ। গত ২৮ জানুয়ারি ওই জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতিপত্র দেয় চসিক। জায়গাটি বরাদ্দপ্রাপ্ত বাকশাল নেতা জানে আলমের নগরের শাহ আমানত দরগাহ লেইনের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের সাবেক প্রশাসক এবং নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আজ মঙ্গলবার দুপুরে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘চসিকের জায়গা বরাদ্দ দেয় রাজস্ব বিভাগ। এটি মেয়র বা প্রশাসকের কাজ নয়। ফুটপাতের জায়গা হলে কাউকে বরাদ্দ দেওয়া যায় না। তবে সেখানে অনেক দিন ধরে চসিকের একটি জায়গা বেদখলে ছিল। শহরে চসিকের এরকম অনেক জায়গা বেদখলে আছে। তাছাড়া আমি এখন প্রশাসক নই। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের জিজ্ঞেস করুন।’

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ সংক্রান্ত ফাইল দেখে বিষয়টি বলতে পারবো। তবে আমি সেখানে লোক পাঠাবো। ফুটপাতের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলে বা কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’