চট্টগ্রাম: ‘২৭ শতাংশ মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে তামাক সেবনে। ক্যান্সার হওয়ার পেছনে তামাকই সবচেয়ে বেশি দায়ী। এখানে ২৭ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তামাক সেবনে। ৪০ থেকে ৬০ বছর এবং ৫০ থেকে ৬০ বছর এ দুই সময়ের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এই দুই বয়সসীমায় আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ করে।’
শুক্রবার চট্টগ্রাম ক্লাবে ক্যান্সার বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য তথ্য তুলে ধরেন চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিল্ড্রেন সার্জারি (ক্রিকস) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বানু।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির অধীনে পরিচালিত ‘ল্যাবরেটরি অব ইউকারেউটিক জিন এক্সপ্রেশন অ্যান্ড ফাংশন’ এবং চিটাগাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর চিল্ড্রেন সার্জারি (ক্রিকস) যৌথভাবে ক্যান্সার নিয়ে করা সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে।২০১৬ সালের ১৫ জুলাই থেকে ১৫ দিন চমেক হাসপাতালে আসা রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।
সমীক্ষার জন্য নির্ধারিত ১৫ দিনে চমেক হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাত হাজার। এরমধ্যে ৬০০ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সমীক্ষাটি চালানো হয়। এ হিসেবে রোগীদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ৭৩ শতাংশেরই বসবাস চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে। নগরীতে এ হার মাত্র ২৭ শতাংশ। নারীদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার হার পুরুষের তুলনায় বেশি। ক্যান্সার শনাক্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী। নতুন এই সমীক্ষা অনুযায়ী, ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিম্ফোমায় আক্রান্ত ২১ শতাংশ। এরপর আছে হেড ও নেক ক্যান্সার। এ দুটিতে আক্রান্ত হচ্ছে ১৬ শতাংশ।
ওই সমীক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকসের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা বানু বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো তথ্যভাণ্ডার নেই।অন্য দেশের রেফারেন্স দিয়ে আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়াতে হয়। দেশে প্রথমবারের মতো ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু করেছি। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ধরন, এজ গ্রুপ, আক্রান্তের কারণ এবং আক্রান্তদের উপার্জন ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি আমরা।
তিনি বলেন, গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হারকে উদ্বেগজনক। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশ কক্সবাজার জেলার। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলায় এ হার ১৫ শতাংশ করে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আরেকটি উপজেলা পটিয়ায় ক্যান্সার আক্রান্তের হার ১৩ শতাংশ। উত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এ হার ১৩ শতাংশ। দক্ষিণ চট্টগ্রামে এ হার বেশি হওয়ার পেছনে শুটকিতে ডিডিটির (এক প্রকার কীটনাশক) ব্যবহার, অতিরিক্ত তামাক সেবন ও ‘কাজিন ম্যারেজ’ (রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে) অন্যতম ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ও গবেষণা সহকারী সুনন্দা বৈদ্য বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ক্যান্সার রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার নেই। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। আর আক্রান্ত হয় প্রায় এক কোটি ৪১ লাখ মানুষ। আগামী ৩০ বছর পর ওই সংখ্যাগুলো বেড়ে দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে, আর এর মধ্যে মারা যাবে এক কোটি ৭০ লাখ। তাই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ধরন, কারণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমীক্ষার তথ্য মতে, ক্যান্সারের মধ্যে লিম্পোমা (ব্লাড ক্যান্সার) রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। ক্যান্সার আক্রান্তদের মাঝে ২১ শতাংশ রোগী এ রোগে আক্রান্ত। এর পরে আছে হেড ও নেক ক্যান্সার। এটিতে আক্রান্ত হচ্ছে ১৬ শতাংশ মানুষ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু সাদাত মোহাম্মদ নোমান, অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের হেড অব পেডিয়াট্রিক সার্জারি ডি কে গুপ্তা, জাপানের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তুমুয়াকি তাগোচি, চমেক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এবং জেনারেল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার এ কে আজাদ সেমিনারে অংশ নেন।