সাফরিন রচি : আমাদের নিজস্ব সত্তা বোধ সবকিছুই কি নিপাত? আমি দেখেছি বর্তমানে অনেক শিক্ষিত মানুষ আদিম বন্য উপজাতিদের চেয়ে অধম। এই সব মানুষগুলোর কোন স্বকীয়তা নেই। ছোটবেলা থেকে যেভাবে কান ভারী করে বড় করা হয়েছে ঠিক সেই গোঁড়াটাই তারা ধরে রেখেছে। এটার বাইরেও যে কিছু চিন্তা করার থাকে সেটা তারা নিতে চায় না। যে যেটা বলে সেটাকেই বিশ্বাস করে। কিন্ত সেটা কি আদৌ সত্য নাকি মিথ্যা তা যাচাই করার আর প্রয়োজন মনে করে না। আর এজন্যই আমাদের নাম আজ হুজুগে বাঙ্গালী।
পরশু দিন থেকে কিছু গরু-ছাগল ইনবক্সে লিংক দিচ্ছে ভারতের বাবরী মসজিদের জন্য ভোট দিতে। না…তারা কোন অশিক্ষিত সম্প্রদায়ের নয়। তারা সবাই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের স্টুডেন্ট। আমি অবাক হলাম এই কারণে যে, তারা একটা শিক্ষিত সমাজের মানুষ হয়ে কীভাবে এই সব লিংক গুলো ছড়াতে পারছে? তারা কি এটা বুঝতে পারছে না এই বিষয়টা টোটালি ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং আমরা বাংলাদেশীদের ভোট, মিছিল মিটিংয়ে মোদির ভারতের একটা বালুও নড়বে না..! আচ্ছা আমরা কেন এটা বুঝতে পারছি না মোদি যদি না চায় তাহলে বাবরি কেন কোন কিছুই ভারতে করা সম্ভব নয়। আর মোদি যে কতটা হিন্দুত্ববাদী এবং রক্ষণশীল তা তো সবারই জানা!
বাঙ্গালী এতটাই হুজুগে জাতি যে, তারা দেশের খেয়ে সৌদি আরব, পাকিস্তান কিংবা ভারতে গিয়ে ডিম পারতে পছন্দ করে। তারা সর্বদা অন্যদের দোষ ধরতে পটু। আর ইসলামকে বিক্রি করে পেট পালা কিছু রামছাগল তো সবকিছুর জন্য আমেরিকা, ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র ভাবে। অথচ তাদেরকে যদি একটা সুযোগ দেওয়া হয় তারা কিন্ত আমেরিকা যাওয়া মিছ করবে না। আর সারাদিন ইহুদীদের বদনামে গা ভাসিয়ে দেওয়া মানুষগুলোও কিন্ত এই ইহুদীদের আবিষ্কৃত জিনিসই ব্যবহার করছে। হাস্যকর…!
কোন এক হিন্দু লোক নাকি ফেবুতে ছবি এডিট করে কাবা শরীফের উপর শীবের ছবি লাগিয়েছে। এই সিলি একটা ব্যাপার কে করেছে তা জাস্টিফাই না করে নাসিরনগরে শত শত হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে আর গ্রেফতার করা হয়েছে এক নির্দোষ হিন্দু জেলেকে। পরে প্রমাণিত হলো এক মুসলমান লোক নাকি এই ছবি পোষ্ট করেছে এডিট করে। ছিঃ…!! আমাদের সমস্যা মূলত এটাই নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করা। আমাদের মধ্যে কোন একতা নেই। রক্ষণশীলতা রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবাহিত। যার জন্য আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এক জাতি। আমাদের মানুষদের এখনো কান নিয়েছে চিলে অবস্থা। হায়…!!
যখন এই গোঁড়া বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া স্টুডেন্টদের মাঝে দেখি তখন সত্যিই নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে খুব লজ্জা লাগে। আপনাদের চেয়ে স্টেশনে কিংবা ফুটপাতে রাত কাটানো মানুষগুলো ঢেড় ভালো। সারাদিন মজুরি খেটে রাতে এসে ঘুম। তাদের অন্তত “শিক্ষিত” ট্যাগটা নেই। আমি মাঝে মাঝে ভাবি পৃথিবীতে আজ ধর্মটা এতটাই সংখ্যাগুরু যে, সে তুলনাই আমরা “মানুষ” এই শব্দটাই সংখ্যালঘু। ধর্মের কারণে রক্তপাত, ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি। জানি না এর শেষ কোথায়!
রবী ঠাকুর হয়ত এক সময় এসব দেখেই বলেছিলেন, “সাত কোটি মানুষেরে হে মুগ্ধা জননী, রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করনি…”
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।