বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ সদস্যের বিচক্ষণতায় বেঁচে গেল দুই শিশু

প্রকাশিতঃ ৮ অগাস্ট ২০১৭ | ১১:৫৫ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম: জাহিদ ও আনিক। বছর দশেকের এই দুই শিশুকে করা হচ্ছিল পাচার। তাদেরকে অজ্ঞান করে ট্রেনে করে আনা হচ্ছিল ঢাকা থেকে। তবে পুলিশের এএসআই মো. নুরুন্নবীর বিচক্ষণতায় ওই শিশু দুটি ফিরে গেছে মায়ের কোলে।

ঘটনাটি গত ৩ আগস্টের। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা একুশে পত্রিকাকে দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা ইউনিটের এএসঅাই মো. নুরুন্নবী; যিনি সম্প্রতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা থেকে বদলি হয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘সরকারী কাজে ৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৩ টায় ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রামে আসার জন্য চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠি। এরপর দেখতে পাই আমার সিটের পাশে রেলের মেঝেতে মাদ্রাসার ড্রেস পরিহিত দুই শিশু ঘুমিয়ে আছে। শিশুদের আশেপাশে একজন মধ্য বয়সী নারী ও ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুইজন পুরুষ ছিল। তাদের কথাবার্তা চালচলন দেখে আমার সন্দেহ হয়।’

‘বাচ্চাগুলো কার জিজ্ঞাসা করলে ওই নারী নিজের বাচ্চা বলে জানান। তখন তাকে অনুরোধ করে বলি, বাচ্চাদের নিয়ে ফ্যানের নিচে বসার জন্য। কিন্তু তিনি তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বলেন ওরা (শিশুরা) এখন ঘুমাচ্ছে। পরে বসবো। এরমধ্যে ট্রেন কুমিল্লা পার হয়ে লাকসামের কাছাকাছি চলে আসে।’

এদিকে ঘুমন্ত শিশুদের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশ কর্মকর্তা নুরুন্নবীর। তিনি তার সন্দেহের বিষয়ে অাশপাশের অন্যান্য যাত্রীদের সাথে অালোচনা করেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কৌশলে সটকে পড়েন দুই পুরুষ। এসময় অন্যান্য যাত্রীরা এগিয়ে এসে ওই নারীর কাছে জানতে চায় বাচ্চা এতক্ষণ ঘুমিয়ে আছে কেন?

এএসঅাই মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘আমরা যখন ওই নারীকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকি, তখন তিনি ঘাবড়িয়ে ওঠেন। প্রকৃতির ডাকে যাওয়ার কথা বলে ট্রেনের টয়লেটে অবস্থান করেন। যখনি ট্রেন নাঙ্গলকোর্ট পৌছায় তখনই দ্রুত অবস্থান পালিয়ে যায় ওই নারী।’

এইবার পুলিশ কর্মকর্তা নুরুন্নবীর সন্দেহ পুরোপুরি সঠিক হয়। পাচার হচ্ছিল শিশু দুটি। ঢাকার সিরাতুল কুরঅান মাদ্রাসার এই দুই ছাত্রকে অজ্ঞান করে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছিল পাচারকারী চক্রটি।

পিবিআই কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, শিশু দুইটির চোখে-মুখে পানি দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হই। ততক্ষণে ট্রেন ফেনী পার হয়ে চট্রগ্রাম অভিমুখি। শিশু জাহিদ তার বাবা-মায়ের ফোন নাম্বার দিতে পারছে না। অপরদিকে অনিক নাম্বার দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।’

এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এএসঅাই নুরুন্নবী। শিশুগুলোকে কিভাবে সঠিক অভিভাবকের কাছে পৌঁছানো যাবে- তাও ঠিক বুঝতে পারছিলেন না তিনি। ট্রেনের গতির সাথে ও দুশ্চিন্তার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এ সময় শিশু অনিক জানায়, সিলেটে অবস্থান করা তার এক চাচীর নাম্বার।

এএসঅাই মো. নুরুন্নবী বলেন, অনিকের চাচীর নাম্বারে ফোন করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলি। অনিকের চাচী পরিবারের অাত্মীয় স্বজন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। এরপর একেএকে অনেকেই আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে। তখন আত্মীয়দের মধ্যে কাউকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় আসতে বলি।’

৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় ট্রেনটি চট্রগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছে। এরপর দুই শিশুকে নিয়ে রেলস্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকেন এএসঅাই নুরুন্নবী। রাত ১১টা ২০ মিনিটে অাগ্রাবাদস্থ পাঠানটুলি থেকে অনিকের খালা আসেন।

পুলিশ কর্মকর্তা নুরুন্নবী বলেন, ‘চার দিন অাগে হারিয়ে যাওয়া ভাগিনাকে দেখে অনিকের খালা হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে দেন। কোলে নিয়ে অাদর করতে থাকেন। পরদিন সকালে ঢাকা থেকে জাহিদের বাবা-মা আসলে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। শিশু দুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া- এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাচারকারীদের কবল থেকে সেদিন দুই শিশু রক্ষা পেয়েছিল। তাদেরকে প্রকৃত অভিভাবকের কাছে আমরা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।’