
চট্টগ্রাম : শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে দশ দিনব্যাপী ৩৯ তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন আজ শনিবার (১৩ জুলাই) হাজারো মানুষের ঢল নামে।
আজকের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, কারবালা ময়দানে নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসূল (দ.) অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন বলেই আমরা আজ সঠিক ইসলাম পেয়েছি। আজ ইসলামের নামে সন্ত্রাস উগ্রবাদী তৎপরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইলেও সরকার সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় তারা সুবিধা করতে পারছে না। ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। সরকার ইসলামের মানবিক ও সম্প্রীতিময় দর্শন তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী মোজাম্মেল হক আরও বলেন, আহলে বায়তে রাসূলকে (দ.) প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসাই ঈমানের দাবি।
মাহফিলে বিদেশি আলোচক ছিলেন, ভারতের কাসওয়াসা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন আল্লামা শাহসূফি সৈয়দ আশরাফ আশরাফি আসসিমনানী। তিনি বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর হাতে দ্বীন ইসলাম জীবন্ত হয়েছে। মুমূর্ষু ইসলামকে বিকৃতকারীদের হাত থেকে তিনি রক্ষা করে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। যতোদিন পৃথিবী টিকে থাকবে, ততোদিন ধরে কারবালা ট্র্যাজেডি ঈমানি জনতার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাবে।
মাহফিলে কুরআন মজিদের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বলেন, হে রাসূল (দ.) আপনি বলুন, আমি দ্বীন ইসলামের জন্য অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছি, তার বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে কিছুই চাইনা। চাই শুধু আমার আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি শর্তহীন আনুগত্য ও ভালোবাসা। তাই, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) তাজিম ও সম্মান উচ্চকিত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক ও প্রিয় নবী (দ)। তাই আহলে বায়তে রাসূলকে (দ.) মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসাই ঈমানের অনিবার্য দাবি।
সভাপতির বক্তব্যে সুফি মিজানুর রহমান বলেন, কারবালা ময়দানে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) তাঁবুতে নামাজ কালাম ছিল। অন্যদিকে ইয়াজিদি নামধারী মুসলমানদের তাঁবুতেও নামাজ কালাম ছিল। কিন্তু নামাজ আদায় সত্ত্বেও এই ইয়াজিদিরা ঈমানহারা ও পথভ্রষ্ট। যেহেতু এদের নামাজের মধ্যে ইশকে রাসূল (দ.) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) মহব্বত ছিল না। তাই এই নামাজের কোনো মূল্য নেই আল্লাহ পাকের কাছে।
আহলে বায়তে রাসূলকে (দ.) মহব্বত করাই ঈমানের দাবি নিয়ে আলোচনা করেন পাহাড়তলী নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, মৌমাছি ফুল থেকে যা আহার নেয় তা মধুতে পরিণত হয়। আর ভোমরাও ফুল থেকে আহার নেয়। কিন্তু তা বিষে পরিণত হয়। এটাই তাদের ফিতরাত ও স্বভাব। ঠিক তেমনি আমাদেরকে আহলে বায়তে রাসূল (দ) কে ভালোবেসে ঈমানের স্বাদ নিতে হবে। পার্থিব কল্যাণ ও অনন্ত জীবনে নাজাতের সওগাত পেতে আহলে বায়তে রাসূলের (দ) দামান আঁকড়ে ধরতে হবে।
আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, নামাজ রোজা যেমন ফরজ, তেমনি আহলে বায়তে রাসূল (দ) কে মহব্বত করাও ভালোবাসাও ফরজ। যারা হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রহ) সহ সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করে তারা পথভ্রষ্ট। তাদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ খাইরুজ্জামান, লেখক-গবেষক মোস্তাক আহমদ, শাহসূফি মওলানা জাকের হোসেন, মওলানা নুরুজ্জামান চিশতী, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন চৌধুরী, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দীন মুহাম্মদ আবু আহসান, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খাতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দীন, আহসানুল করিম, সৈয়দ সেহাব উদ্দিন আলম।
কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। নাতে রাসুল (দ) পেশ করেন শায়ের মোহাম্মদ মহিউদ্দীন তানভীর। ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ ছালামত উল্লাহর সঞ্চালনায় মাহফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ, বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদনশীনগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক ও মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মোহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, আনোয়ারুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী, প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমদ, দিলশাদ আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, জাফর আহমদ সওদাগর, আবদুল হাই মাসুম, মনসুর সিকদার, এসএম সিরাজউদ্দোলা, এস এম সফি, ক্যাপ্টেন এনামুল হক, এএফ মোহাম্মদুর রহমান, উপাধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল ওয়াদুদ, মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার, মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
সালাত সালাম শেষে দেশ জাতির শান্তি কল্যাণ এবং ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। মাহফিলে মসজিদের নিচতলায় পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা রয়েছে।