একুশে প্রতিবেদক : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন, যার ফলে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসনের অবসান ঘটে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতের দুরবস্থা সামনে আসে।
ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই আর্থিক চাহিদা মেটাতে সমস্যায় পড়ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনৈতিকভাবে অর্থ ছাপানো বন্ধ করে দেওয়ায়, বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের জমানো অর্থ ফেরত দিতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি অর্থ ছাপাবে না, বরং তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে সহায়তা করবে। ব্যাংকের ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই ‘বিশেষ ধার’-র গ্যারান্টিও দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে সংকটকালীন অর্থের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধায় অর্থ সহায়তার জন্য সাতটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক আবেদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। তারল্য সংকটে থাকা এসব ব্যাংকের কিছু ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত সহায়তা চেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধায় ঋণ দিতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী, সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির ভিত্তিতে অন্য ব্যাংক থেকে তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদী ঋণ নিতে পারবে।
এই সুবিধা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, যেমন আমানত, ঋণ, খেলাপি ঋণ ইত্যাদি বিষয় যুক্ত করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবেদন যাচাই-বাছাই করে গ্যারান্টি প্রদান করবে।
এই গ্যারান্টির ভিত্তিতে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে এবং ঋণ আদায়ের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আয় অব্যাহত রাখতে তারা ক্ষুদ্রঋণ দিতে পারবে, তবে বড় ঋণ দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সব আবেদন একসাথে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে, প্রয়োজনে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে আমানত হিসেবে টাকা নিতে পারবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিশ্চয়তা দেবে। এই প্রক্রিয়াটি প্রস্তুত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান সহায়তা আমানতকারী ও পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়, প্রকৃত প্রয়োজন আরও অনেক বেশি।
শুধু গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নয়, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন অধিকাংশ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক আর্থিক চাহিদা মেটাতে সমস্যায় পড়ছে। তারল্য সংকট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ সহায়তা বন্ধ হওয়ায়, প্রায় এক ডজন বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। কিন্তু জামানত শেষ হয়ে যাওয়ায়, তারা এখন বিশেষ সুবিধা চাইছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় এস আলম গ্রুপ ৮টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। বর্তমানে এসব ব্যাংকের পুরোনো পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।