বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

বিদেশে থাকা সাইফুজ্জামানের বিপুল সম্পদ জব্দের উদ্যোগ শুরু

| প্রকাশিতঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

সাইফুজ্জামান চৌধুরী
একুশে প্রতিবেদক : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে অর্জিত বিপুল সম্পদ জব্দের লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ইতোমধ্যেই এসব সম্পদ চিহ্নিতকরণে অগ্রসর হয়েছে এবং বেশ কিছু সম্পদের তথ্যও সংগ্রহ করেছে। এখন আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের পাশাপাশি, সম্প্রতি আলজাজিরার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব সম্পদ চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএফআইইউ বেশ কয়েকটি বিদেশি সংস্থার সহায়তা চাইছে এবং সাইফুজ্জামানের সম্পদের তথ্য জানাতে যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামসহ তাদের সম্পদের সবকিছু বিশদভাবে উল্লেখ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

তদন্তের একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের ভূমি অফিসের নথিপত্র অনুযায়ী, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে প্রায় ১৫ কোটি পাউন্ড মূল্যের ২৮০টি সম্পত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ডলারেরও বেশি।

সাইফুজ্জামানের স্ত্রী দুবাইতে আরও ৫০টি সম্পত্তির মালিক, যার মোট মূল্য প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের বিশ্বব্যাপী এই বিপুল সম্পদের মোট মূল্য প্রায় ৬০ কোটি ডলারের ওপরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও নীতিনির্ধারকদের সহায়তায় সাইফুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্যে একটি আইনজীবী ফার্ম নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং শীঘ্রই আইনজীবী ফার্ম নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই আইনি ফার্মটি সাইফুজ্জামানের অবৈধ সম্পদ জব্দের পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করবে এবং যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রয়োজনে আইনি সহায়তা প্রদান করবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সরকারের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে এবং দেশটির সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগম এই সম্পদ জব্দের জন্য দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) কাছে সাইফুজ্জামানের সম্পদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সম্পদ ফিরে পাওয়া জরুরি। তার মতে, এই সম্পদ বাংলাদেশের মালিকানাধীন হওয়া উচিত এবং এ বিষয়ে দেশটির জনগণও সচেতন।

তথ্য অনুযায়ী, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পিতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুও আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার সময়েও লন্ডনে একটি বাড়ি কেনা হয়েছিল। পরবর্তীতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরও অর্থ পাচার করে যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। দেশের কিছু নেতা ও শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব তার এই সম্পদের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই অবগত ছিলেন এবং তার লন্ডনের বাড়িতে অবস্থান করতেন বলে জানা যায়।

সরকার এই পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে এবং প্রক্রিয়াটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী করতে দেশের প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে।

টাস্কফোর্সের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাইফুজ্জামানের বিদেশে সম্পদ সম্পর্কে আলোচনা হওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারও এই বিষয়ে কিছুটা চাপ অনুভব করছে। ফলে সরকার দ্রুতই সম্পদ জব্দের উদ্যোগে অগ্রসর হচ্ছে, যাতে অন্য পাচারকারীদের কাছে এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সরকারের এই উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।