বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশের বাজারে কমছে না

প্রকাশিতঃ ২ নভেম্বর ২০২৪ | ৭:৪৩ অপরাহ্ন

মুদি দোকান
একুশে প্রতিবেদক : বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম নিম্নমুখী। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের বাকি সময়ে পণ্যের দাম আরও কমবে এবং এ প্রবণতা আগামী দুই বছর অব্যাহত থাকবে।

আগামী বছরই পণ্যের দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমার প্রভাবে আমদানি খরচ কমেছে এবং ডলারের দামও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। চাল, পেঁয়াজসহ বেশকিছু আমদানি পণ্যের শুল্ক কমানোর ফলে আমদানির খরচ আরও কমেছে।

এমন পরিস্থিতিতে আমদানির উপর নির্ভরশীল পণ্যের দাম বাজারে কমার কথা থাকলেও, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশীয় বাজারে এই পণ্যের দাম বরং বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমানোর বদলে নিজেদের মুনাফা বাড়িয়ে নিচ্ছেন, যা ভোক্তাদের জন্য চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় ৯ শতাংশ কমবে এবং জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭৩ ডলারে নামবে। এ কারণে আন্তর্জাতিকভাবে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয়ও কমে যাবে, ফলে পণ্যের দামও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তাদের অধিকাংশের দামই আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার থেকে নেমে এসেছে ৭৮ ডলারে। এতে জাহাজ ভাড়া এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যয়ও কমেছে। তদ্ব্যতীত, আমদানি খরচ কমানোর জন্য শুল্কও কমানো হয়েছে, যা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমানোর অনুঘটক হিসেবে কাজ করা উচিত ছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ডিসেম্বর থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। তবে দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠেছে। বোতলজাত তেলের দামও ১৭০ টাকা হয়েছে, যা এক মাস আগে ছিল ১৬৭ টাকা। এ বিষয়ে এক ব্যবসায়ী জানান, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমলেও করপোরেট কোম্পানিগুলো দেশীয় বাজারে দাম কমায়নি, বরং আরও বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম গত ৯ মাসে প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চালের দাম ধারাবাহিকভাবে কমলেও দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। দেশে মোটা চালের প্রতি কেজির দাম বেড়ে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় এবং মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৭০ টাকায় পৌঁছেছে। আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলাররা চালের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করছে।

দেশে খোলা আটা প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দামও প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমেছে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ।

দেশীয় উৎপাদিত ফার্মের মুরগির দামও কমেনি, বরং দেশের বাজারে প্রতি কেজি ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গরুর মাংসের দামও কিছুটা বেড়েছে, তবে দেশীয় বাজারে গরুর মাংসের দাম প্রতিকেজি ৮০০ টাকা, যা ভোক্তাদের ওপর আরও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম সামান্য কমলেও দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় পৌঁছেছে, যা এক মাস আগে ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। এ ছাড়া, ডালের দামও বেড়ে গড়ে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, দেশীয় বাজারে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। আমদানির খরচ কমলেও ভোক্তারা এর সুবিধা পাচ্ছেন না; বরং ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মুনাফা বাড়াচ্ছেন। সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির অনিয়মগুলো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ভোক্তাদের সহনশীল জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে মূল্য পরিস্থিতি সঠিক পথে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।