ঢাকার একটি আদালত আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
ঢাকা মহানগর আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এই আদেশ দেন। আদালত আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া আদালতে ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় ১৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অসৎ উদ্দেশ্যে হলফনামায় তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট নিয়েছেন। যেখানে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ঢাকা শহরে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট অথবা আবাসন সুবিধা রয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে তার মায়ের কাছে আবদার করে রাজউকে কোনো আবেদন ছাড়াই প্লট বরাদ্দ পান। পরবর্তীতে তিনি বরাদ্দকৃত প্লটটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করে ভোগদখলে রেখেছেন।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বে থাকা অপর ১৬ জন আসামি অবৈধভাবে প্রভাবিত হয়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে আইনবহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করেছেন। তিনি তার মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া-নেওয়া, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।