সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জব্দ টাকা-স্বর্ণালংকার এজাহারে নেই: বাদী কোস্টগার্ড সদস্যকে তলব আদালতের

কক্সবাজার প্রতিনিধি | প্রকাশিতঃ ১০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭:৫১ অপরাহ্ন


টেকনাফে এক অভিযানে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালংকার জব্দের পর মামলার এজাহারে সেগুলোর তথ্য উল্লেখ না করায় বাদীকে তলব করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আখতার জাবেদ এই আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী, মামলার বাদী ও কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের সদস্য কায়সার আহমেদকে আগামী ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশেক ইলাহী শাহজাহান নুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালতের আদেশের কপি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশনে পাঠানো হবে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৩ এপ্রিল। সেদিন কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর একটি যৌথ দল টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালীতে হারুন ডাকাতের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে কোস্টগার্ডের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেখান থেকে একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ছয়টি তাজা গুলি, পাঁচটি দেশি ধারালো অস্ত্র, ১৭ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা নগদ, দুটি ব্যাংকের চেক বই, ১০টি সিম কার্ড এবং মিয়ানমারের ১৯টি রোহিঙ্গা পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের সময় হারুন ডাকাত পালিয়ে যান।

কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো ছবি ও ভিডিওতে জব্দকৃত অস্ত্র ও গুলির পাশাপাশি টাকা এবং স্বর্ণালংকারও দেখা যায়, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রকাশিত হয়।

কিন্তু টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, এই ঘটনায় কোস্টগার্ড সদস্য কায়সার আহমেদ বাদী হয়ে ৩ এপ্রিল শুধুমাত্র অবৈধ অস্ত্র ও গুলি রাখার অভিযোগে হারুন ডাকাতের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহার এবং জব্দ তালিকায় জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালংকারের কোনো উল্লেখ ছিল না। কেন উল্লেখ করা হয়নি, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

বিষয়টি আদালতের নজরে আসে ৮ এপ্রিল প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে। “কক্সবাজারে জব্দ টাকা ও স্বর্ণালংকারের তথ্য এজাহারে নেই” শিরোনামের ওই সংবাদ পর্যালোচনার পর আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, মামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলামতের (টাকা ও স্বর্ণালংকার) ছবি প্রকাশিত হলেও এজাহার ও জব্দ তালিকায় তা উল্লেখ না থাকায় আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, বাদী কায়সার আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে উক্ত টাকা ও স্বর্ণালংকার নিজের আয়ত্তে রেখেছেন।

এদিকে, এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক পূর্বে জানিয়েছিলেন, কিছু অনিবার্য কারণে জব্দ করা টাকা ও স্বর্ণালংকার শুল্ক বিভাগে জমা দিতে বিলম্ব হয়েছিল। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ৭ এপ্রিল বিকেলে সেগুলো টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে।

আদালতের এই তলবের ঘটনাটি জব্দকৃত আলামত নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলো। বাদীর লিখিত ব্যাখ্যার পরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।