বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

আমদানি পণ্যের বাজার: বিশ্ববাজারে পতন অব্যাহত, দেশে প্রভাব কতটা?

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১৫ মে ২০২৫ | ১০:১৫ পূর্বাহ্ন


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার নিম্নমুখী হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দুই বছর এই নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকতে পারে এবং চলতি বছর গড় দাম কমতে পারে প্রায় ১২ শতাংশ। ২০২৬ সালে তা আরো ৫ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে বেশির ভাগ পণ্য আমদানিনির্ভর হওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব কতটা পড়বে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে যত দ্রুত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, কমার বেলায় সেই প্রবণতা দেখা যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বৈশ্বিক পণ্যবাজার নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত এপ্রিলেও বিশ্ববাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম ছিল পড়তির দিকে। দাম কমার পেছনে কারণ হিসেবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দুর্বল প্রবৃদ্ধিসহ জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ প্রভাব রাখছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় বৈশ্বিক পণ্যবাজারে ক্রুড অয়েল, এলএনজি, পাম অয়েল, গম, চাল, চিনি ও ইউরিয়া সারের দাম নিম্নমুখী ছিল। এর মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ দশমিক ৭০ থেকে কমে ৬৫ দশমিক ৯০ ডলারে নামে। সংস্থাটির প্রক্ষেপণ বলছে, জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের গড় দাম চলতি বছর ব্যারেলপ্রতি ৬৪ ডলার ও আগামী বছর ৬০ ডলারে দাঁড়াতে পারে। একই সময়ে পাম অয়েলের দাম টনপ্রতি ১ হাজার ৬৮ থেকে কমে ৯৯৪ ডলার হয়েছে। গমের দাম গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কমেছে, চিনির দাম প্রতি কেজি ৪২ থেকে কমে ৪০ সেন্ট হয়েছে এবং ইউরিয়া সারের দাম টনপ্রতি ৩৯৪ দশমিক ৫০ থেকে কমে হয়েছে ৩৮৬ দশমিক ৯০ ডলার। অবশ্য এ সময়ে সয়াবিন তেল, তুলা এবং কয়েকটি সারের (ডিএপি, ফসফেট রক, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, টিএসপি) দাম কিছুটা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম, ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি পণ্য, তুলা ও সার আমদানি করেছে।

দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এলএনজি, ক্রুড অয়েলসহ দেশে আমদানি হয় এমন সারের দাম কমতে থাকায় খাদ্যপণ্যের প্রক্রিয়াজাত, কৃষি ও উৎপাদন খাতে তার প্রভাব পড়বে। দেশীয় পরিবেশগত সুবিধার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের খাদ্যশস্যের বাজার আরো এক ধাপ স্থিতিশীলতায় আসতে পারে বলে আশা করছেন তারা।

খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, “বিগত কয়েক বছর বিশ্ব পণ্যবাজার ছিল অস্থিতিশীল। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিভিন্ন পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত কমে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতিসহ নানা উদ্যোগের ফলে পণ্যবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।” এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম আরো বেশি স্থিতিশীলতায় ফিরবে বলে আশা করছেন এ ব্যবসায়ী।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বিগত এক বছর বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশীয় নানা সংকটে চালের বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বর্তমানে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। সম্প্রতি সয়াবিনসহ পাম অয়েলের দাম কিছুটা বাড়ালেও বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম এক মাসের ব্যবধানে টনপ্রতি প্রায় ৭০ ডলার কমেছে। একইভাবে গমের দামও কমেছে টনপ্রতি ৬-৮ ডলার।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রিজার্ভ দিন দিন বাড়ছে। আইএমএফের ঋণ কিস্তি ছাড়ের ঘোষণার পাশাপাশি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াসহ আমদানিতে নানামুখী শর্ত সরকার একে একে তুলে নিচ্ছে। সে কারণে ব্যবসায়ীরাও বৈশ্বিক দাম কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর দিকে হাঁটছে। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা ও ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে পণ্য আমদানি প্রক্রিয়া আরো বেশি সহজতর হবে। এতে দেশের বিদ্যমান ঘাটতি কমে পণ্যবাজারের সরবরাহ সংকট কমে বাজার আরো বেশি স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে, দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলেও বৈশ্বিক বুকিং কমতে থাকায় পাইকারি বাজারে খোলা ভোজ্যতেলের দাম নিম্নমুখী। বর্তমানে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল লেনদেন হচ্ছে ৫ হাজার ৭০০ টাকা দামে। এছাড়া খোলা সয়াবিনের দাম মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে ৬ হাজার ১৭০ থেকে ৬ হাজার ১৮০ টাকায়। এছাড়া চিনির দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা কমে ৩ হাজার ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। গমের দাম কমে এখন মণপ্রতি লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।