
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত জাতীয় বাজেট এবং আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ও অর্থ বিল অনুমোদন দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো অর্থবছরের বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় হ্রাস পাওয়ার ঘটনা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, সেই হিসাবে নতুন প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
সোমবার (২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৬২ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে বলে জানানো হয়েছে।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেওয়া হয়েছে।
এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। দেশে সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেট একইভাবে টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন।
সাধারণত প্রতি বছর জুনের প্রথম সপ্তাহের যেকোনো বৃহস্পতিবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হলেও, এবার পবিত্র ঈদুল আজহার (আগামী ৭ জুন) ছুটির আগেই বাজেট উপস্থাপন করা হলো। বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন আগামীকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা বাজেট নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন।