বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

দুবাইয়ে সহকর্মীর নির্মম হামলায় প্রাণ গেল মহেশখালীর আরিফের

মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিনিধি | প্রকাশিতঃ ৩ জুন ২০২৫ | ১২:১৮ অপরাহ্ন


সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মোহাম্মদ ওসমান নামে এক রুম সহকর্মীর ভারী বস্তুর আঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পাঁচ দিন পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের দেবাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আরিফ (২৬)। গত ২৭ মে (মঙ্গলবার) সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় আরিফের ওপর এই হামলা চালানো হয় বলে তার পরিবার জানিয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আইসিইউতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আরিফের মৃত্যুর খবরে তার নিজ গ্রামসহ পুরো মহেশখালীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতের ভাগিনা ইফতাদুল হাসান তামিম তার মামার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, “আমার মামা মোহাম্মদ আরিফ ২৭ মে সকালে রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় ছোট মহেশখালী লম্বাঘোনার মোহাম্মদ বাদশার ছেলে ওসমান নামের এক যুবকের অতর্কিত হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘটনার আগে তাদের মধ্যে কোনো একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হলেও সেটি তাৎক্ষণিকভাবে মিটমাট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরদিন ওসমান ঘুমন্ত অবস্থায় মামার মাথায় ভারী কোনো বস্তু, সম্ভবত লোহার রড দিয়ে, আঘাত করে পালিয়ে যায়।”

এরপর গুরুতর আহত আরিফকে তার অন্য রুমমেটরা উদ্ধার করে দুবাইয়ের একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ আরিফ পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করার আশায় মাত্র দুই মাস আগে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ভিসা ও টিকিটের টাকা জোগাড় করে দুবাই পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একটি কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন। অভিযুক্ত রুম সহকর্মী মোহাম্মদ ওসমানও একই উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের লম্বাঘোনা এলাকার বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে আরও জানা যায়, ঘটনার আগে কিছুদিন ধরেই আরিফ ও ওসমানের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। ঘটনার দিন (২৭ মে) সকালে সেই উত্তেজনার জের ধরেই ঘুমন্ত আরিফের ওপর হামলা চালানো হয়।

নিহত আরিফের অকালমৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকায় গভীর শোক বিরাজ করছে। স্থানীয় বড় মহেশখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, “আরিফ অত্যন্ত ভদ্র ও পরিশ্রমী ছেলে ছিল। তার এই নির্মম মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। সরকারের উচিত এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা এবং নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা।”

এদিকে, দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনি সহায়তা দেবে বলে নিহতের পরিবারকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানা গেছে। আরিফের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।