
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডারসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার পর ইরানের অন্তত ছয়টি স্থানে এই হামলা শুরু হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। তেল আবিব বলছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে একটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের শুরু হিসেবে এই হামলা চালানো হলো।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসেইন সালামির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টার্সের কমান্ডার গোলামালি রাশিদ, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফেরেয়দুন আব্বাসি এবং মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচিও এ হামলায় নিহত হয়েছেন।
হামলার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেই নিজের জন্য একটি করুণ পরিণতির পথ তৈরি করেছে। এই অপরাধের কারণে তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে জায়নবাদী শাসকদের।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু হয়েছে। আমাদের এই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ইরানি হুমকি প্রতিরোধ করা। যতদিন না এই হুমকি বন্ধ হচ্ছে, ততদিন এ অভিযান চলবে।”
ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের মধ্যাঞ্চলে প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জসহ ডজনখানেক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। হামলার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) জানিয়েছে, তারা ইরানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে জড়িত নয় এবং আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো, ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
ইরানে হামলার প্রভাবে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে এবং তেলের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন।
হামলার জবাবে ইরানও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান ইসরায়েলের দিকে প্রায় ১০০টি ড্রোন পাঠিয়েছে এবং সেগুলো ভূপাতিত করতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে।