ঢাকা: তুরস্কের ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মঙ্গলবার রাতে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৩৬ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক আহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।
এ হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করেছে তুরস্কের নিরাপত্তা সংস্থা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বলেন, এই হামলার পেছনে আইএস থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তুরস্কে কাছাকাছি সময়ে একের পর এক সন্ত্রসী হামলা চলছে। বিশ্লেষক গ্যারেথ জেংকিনস বলেন, এই হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার না করলেও সন্দেহের তীর রয়েছে কথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী অথবা কুর্দি জঙ্গি গোষ্ঠী পিকেকের দিকে। গত বছর কুর্দি জঙ্গিদের সঙ্গে তুরস্কের সরকারের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে পিকেকে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীও তুরস্কে কয়েকটি হামলা চালিয়েছে।
তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর সন্দেহ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্তের কাজ শুরু করেছে। এ বছর তুরস্কে বেশ কয়েক দফায় বোমা হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ইস্তাম্বুলের পর্যটন এলাকায় দুই দফা আত্মঘাতী হামলা হয়, যার জন্য আইএসকে দায়ী করা হয়। এছাড়া রাজধানী আঙ্কারায় দুটি গাড়ি বোমা হামলা হয়, যার দায় স্বীকার করে একটি কুর্দি জঙ্গি গ্রুপ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান তারা। তারপর বোমা বিস্ফোরণ। টার্মিনালে ঢোকার পথে একজন বন্দুকধারী শুরুতে গুলি চালায় এবং তারপর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
টেলিভিশন ফুটেজে ঘটনাস্থলের দিকে অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যেতে দেখা যায়। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, বিমানবন্দরের কার পার্ক থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। ট্যাক্সিতে করে বিমানবন্দর থেকে আহতদের নেয়া হচ্ছিল বলে জানান তিনি। হামলার পর আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত ফ্লাইটগুলো বাতিল করে যাত্রীদের হোটেলে ফেরত পাঠানো হয় বলে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা জানান।
এর আগে এক কর্মকর্তা জানান, ওই বিমানবন্দরের কিছু ফ্লাইট অন্য পথে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের পর ইউরোপের ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরের সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও পরে আবার চালু করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরটিকে অনেকদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছিল। কারণ যাত্রীদের প্রবেশ পথে লাগেজ স্ক্যান করা হলেও সেখানে টার্মিনালে আসা গাড়ির জন্য কোন স্ক্যানার নেই।
ধারণা করা হচ্ছে, আত্মঘাতী এই হামলায় মোট তিনজন জঙ্গি অংশ নেয়। হামলায় নিহতদের বেশিরভাগ তুরস্কের নাগরিক। বিদেশি যেসব ব্যক্তি নিহত হয়েছেন তাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
হামলার নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানিও একই ধরনের ঘোষণা এসেছে। সন্ত্রাস-উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক তৎপরতা জোরদারের কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।