
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ আর প্রাথমিকে শিক্ষকের আন্দোলন—দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পুরো শিক্ষাঙ্গন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন, অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে প্রতিদিনই রাজপথে নামছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
অন্যদিকে, প্রশাসনিক দুর্বলতা, কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধ এবং যথাসময়ে পাঠ্যবই ছাপাতে না পারার মতো সংকটে শিক্ষা প্রশাসনেও স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলছে। এছাড়া, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা ইস্যুতে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে নেমেছেন।
শিক্ষকরাও পিছিয়ে নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজি বলেন, “আমাদের দাবি যৌক্তিক, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা দাবি পূরণে গড়িমসি করছে। দাবি আদায়ে সময় বেঁধে দিয়েছি, এর মধ্যে দাবি না মানা হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব।”
একইভাবে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবিতে আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, “দাবি পূরণে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারাও পদোন্নতি ও গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে হতাশ। উপজেলা ও থানা সহকারী শিক্ষা অফিসারদের পদ ৩১ বছর ধরে দশম গ্রেডেই অপরিবর্তিত রয়েছে। আবার সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের প্রায় ১৫০টি পদ শূন্য এবং তাদের পদোন্নতিও দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে, যা মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা। চলতি বছর শিক্ষার্থীরা মার্চ-এপ্রিল নাগাদ বই পেলেও, আগামী বছরের জন্যও একই রকম বা তার চেয়েও বেশি বিলম্বের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, “আমাদের এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে শিক্ষাটা অগ্রাধিকার থেকে ছুটে গেছে। শিক্ষায় আমরা শুধু পুনর্গঠন চাইছি না, রূপান্তর চাইছি। রূপান্তর শুধু বই ছাপালে বা শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করলে আসবে না। শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার্থী বানিয়ে নয়, শিক্ষার্থীকে মানুষ করতে হবে।”