বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

গণভোট-দ্বৈত ক্ষমতাসহ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন

বিশেষ আদেশের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরুর পরামর্শ, চূড়ান্ত প্রস্তাব চলতি মাসেই
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন


জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিতে যাচ্ছে। একটি বিশেষ আদেশ জারি, তার ভিত্তিতে গণভোট এবং আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত (সংবিধান সংস্কার ও আইন প্রণয়ন) ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করতে পারে কমিশন।

গত শুক্রবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরিত এই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি না হলেও, কমিশন এ মাসের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ শনিবার বলেন, “কমিশন যত দ্রুত সম্ভব জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারকে দিতে চায়। ইতিমধ্যে কমিশন একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। সেটার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে অতিদ্রুত সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।”

কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে কমিশন শনিবার বৈঠক করেছে। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করার আগে আজ রোববার আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

সুপারিশে যা থাকতে পারে

সূত্রমতে, কমিশন মনে করে, জুলাই সনদের সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে টেকসই করতে গণভোটের পাশাপাশি আগামী সংসদকে সংবিধান সংশোধনের বিশেষ বা ‘গাঠনিক ক্ষমতা’ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, সনদে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

গণভোট আয়োজনের জন্য প্রথমে সরকারকে একটি ‘বিশেষ আদেশ’ জারির সুপারিশ করা হতে পারে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে, নাকি নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে হবে—এই সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে কমিশন।

কমিশন দুটি বিকল্প বিবেচনা করছে: পুরো সনদটিকে গণভোটে দেওয়া অথবা সনদের কিছু প্রস্তাব বিশেষ আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে বাকিগুলো গণভোটে দেওয়া।

রাজনৈতিক মতভিন্নতা

যদিও সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নীতিগত ঐকমত্য রয়েছে, তবে গণভোটের আইনি ভিত্তি, সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

বিএনপি মনে করে, একটি অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে এবং এর জন্য আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায়, নির্বাচনের আগেই একটি ‘জুলাই বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হোক এবং আগামী সংসদকে অবশ্যই দ্বৈত ক্ষমতা দিতে হবে।

যারা সই করেননি

গত শুক্রবার ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে। গণফোরাম আজ রোববার সই করবে বলে জানা গেছে। তবে আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পাওয়ায় এনসিপি এবং সংশোধিত খসড়া না পাওয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ সনদে সই করেনি।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এনসিপিসহ স্বাক্ষর না করা দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।